পঞ্চগড়ের তুলারডাঙ্গায় নিখোঁজের একদিন পর আশামনি নামে চার বছরের এক শিশুর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত আশামনির গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাঁটা ছেড়ার দাগ থাকলেও বাবা-মা বলছেন, জ্বিনে হত্যা করেছে। এমন কথা বলছেন এলাকাবাসীও ।এদিকে সুরতহাল পরীক্ষায় হত্যাকাণ্ডের আলামত পাওয়া গেলেও পুলিশ এখনো কাউকে আটক করেনি । বৃহস্পতিবার সকালে আশামনির লাশের ময়না তদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
গত বুধবার বিকেলে নিকটতম প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের শোয়ার ঘরের পেছন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় । আশামনির বাবা-মায়ের দাবি, তাকে জ্বিন হত্যা করেছে । তাই ময়না তদন্ত ছাড়াই হাসপাতাল থেকে মরদেহ নেয়ার জন্য বুধবার রাতভর চেষ্টা তদবির করেছেন তারা। স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও ময়না তদন্ত ছাড়াই পরিবারের হাতে লাশ তুলে দেয়ার জন্য পুলিশের কাছে তদবির করেছেন বলে জানা গেছে । এ নিয়ে পঞ্চগড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ।
নিহত আশামনির বাবা শহরের তুলারডাঙ্গা মহল্লার আশরাফুল ইসলাম এবং মা লিপি আক্তার বলেন, আমাদের মেয়েকে জ্বিন নিয়ে গিয়েছিল। সময়মত জ্বিন ফেরত দিয়েছে। ওঝা (তান্ত্রিক) ডেকে প্রতিবেশীসহ তারা নিশ্চিত হয়েছেন দাবি করে জানান, কারো প্রতি আমাদের কোন প্রকার সন্দেহ বা অভিযোগ নেই। এজন্য ময়না তদন্ত না করেই শিশুটিকে দাফন করতে চাই।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে বাসায় খেলাধুলার এক পর্যায়ে নিখোঁজ হয় আশামনি। এরপর থেকে প্রতিবেশীসহ পরিবারের লোকজন বিভিন্ন স্থানে শিশুটির খোঁজ করে। পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য মতে শিশুটিকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে রাতভর জগদল এলাকার এক ওঝা ডেকে আনা হয়। তিনি তুলা রাশির জাতক দিয়ে তন্ত্র মন্ত্র শুরু করেন। এক পর্যায়ে ওই ওঝা বলেন, জ্বিনদের কাছে শিশুটি ভাল আছে, বাগানে খেলছে । বিকেলে আসরের আযানের পর জ্বিনেরা শিশুটিকে এনে দেবে।
বুধবার বিকেলে প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের ছেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাজু(১৪) ঘরের পেছনে শৌচকর্ম করতে গেলে কথিত জ্বিন তার সামনে শিশুটিকে উপর থেকে ফেলে দেয়। সাথে সাথেই সে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারায়। সাজু জানায়, সে উপরে দেখতে পায় না। জ্বিন তার সামনে শিশুটিকে ফেলে দেয়।
তার চিৎকারে শিশুটির এক চাচা মো. আলম প্রথমে শিশুটিকে দেখতে পান। এক পর্যায়ে শিশুটির মা লিপি আক্তার তার একমাত্র মেয়ের মরদেহ কোলে তুলে নেন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
এদিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই শিশুটির মরদেহ নিতে তার পরিবারের সদস্যসহ তুলারডাঙ্গা মহল্লার শতাধিক বাসিন্দা থানায় ভীড় করেন।
এদিকে পঞ্চগড়ের সচেতন মহলের কাছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে পশ্ন দেখা দিয়েছে । তারা ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন।
পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ রবিউল হাসান সরকার জানান, জ্বিনের গল্পটি সাজানো। সুরতহাল দেখে মনে হয়েছে এটি হত্যাকাণ্ড। ময়না তদন্ত হয়েছে । ইউডি মামলাও হয়েছে । বাবা-মার কোন অভিযোগ না থাকায় এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে তদন্ত হবে।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ