ময়মনসিংহের ভালুকায় ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বাজেয়াপ্ত (ফরফিডেট) খতিয়য়নভুক্ত ও সরকারি বন বিভাগের প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের ১১ একর জমি ৮ কোটি ২২ লাখ টাকা মূল্য ধরে রেজিস্ট্রি করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুধু ওখানেই শেষ নয়, আরো ভুয়া খতিয়নের অর্ন্তভূক্ত জমি বিক্রির পাঁয়তারা করছে একটি চক্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার হবিরবাড়ি মৌজার ১৫৪ নম্বর দাগে (খতিয়ান নম্বর-১০৯) বন বিজ্ঞপ্তিত জমি থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের এক হাজার একশ শতাংশ (১১ একর) জমি জনৈক সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ভালুকা সাবরেজিস্টার শাহ জালাল মোল্লাকে ম্যানেজ করে রবিন টেক্স (বাংলাদেশ) লিমিটেডের পক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী রবিন রাজন সাখাওয়াত নামে এক ব্যক্তির কাছে ৮ কোটি ২২ লাখ টাকা মূল্য ধরে ২৩ এপ্রিল সাবকবলা দলিল (নম্বর-৩৬৯১) বিক্রি করে দিয়েছেন। দলিলটি সম্পাদন করেন, ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মো. সবজুল ইসলাম (সনদ নম্বর-৬৩৯৪)। দলিলটিতে সনাক্তকারী বা স্বাক্ষীর মাঝে এ উপজেলার কোন ব্যক্তি নেই। সকলেই ঢাকা বা বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
আরো জানা যায়, জমি বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), সার্ভেয়ার, তৎকালিন ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা, বিট অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীর স্বাক্ষর জাল করে ডিমারগেশন ম্যাপ, বিভিন্ন তদন্ত রিপোর্ট ও খাজনা রশিদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের ফিরিস্তি তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে জমি রেজিস্ট্রির পাঁয়তারা করে আসছিলেন। প্রথমে ভালুকা সাবরেজিস্টার রেজিস্ট্রি করতে অপারগতা স্বীকার করলেও রহস্যজনক কারণে এ বছরের গত ২৩ এপ্রিল দলিলটি রেজিস্ট্রি করে দেন।
উল্লেখ্য, জমিদার সত্যব্রত চাকলাদার হবিরবাড়ি মৌজাসহ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। ১৯৫০ সালে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর জমিদারদের অবশিষ্ট সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত (ফরফিটেড) খতিয়ানের অর্ন্তভূক্ত হয়ে যায়। কিন্তু অভিযুক্ত জমি বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করেন যে, জমিদার সত্যব্রত চাকলাদারের কাছ থেকে তিনি উপজেলার হবিরবাড়ি মৌজার ১০৯ নম্বর খতিয়ানে ৯, ৮৭, ১১০ ও ১৫৪ নম্বর দাগ থেকে ১৫৪ বিঘা (৫৮ একর) জমি নান্দাইল সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ৩০-০৪-১৯৭০ সালে সাবকবলা দলিল করে নেন এবং এই মূলে তিনি ৫৮ একর জমির মালকানা লাভ করেন। পরবর্তিতে বিভিন্ন সময়ে মামলা মোকদ্দমাসহ জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র ঠিক করে ওই অংশ থেকে ১১ একর জমি বিক্রি করেন।
হবিরবাড়ি এলাকার নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক এক ব্যাক্তি জানান, সিরাজুল ইসলাম যে কাগজপত্র দেখাচ্ছেন, সেটি জাল। ২০০০ সালে ১৫৪ নম্বর দাগটির যৌথভাবে সীমানা নির্ধারণ (ডিমারগেশন) হয়। ওই ডিমারগেশনের সময় রেকর্ডিও জমির ১৬ জন মালিক ২৮ একর ৭০ শতাংশ এবং বাজেয়াপ্ত ২১ জন মালিক ৩৯ একর ৩০ শতাংশ জমির কাগজপত্র দেখিয়ে জমির দখল বুঝে পান। কিন্তু রেকর্ডিও ও বন্দোবস্তপ্রাপ্ত জমির মালিকদের মাঝে সিরাজুল ইসলাম নামে কোন ব্যক্তির নামে ডিমারগেশন হয়নি। ১৯৭১ সালে নান্দাইল সাবরেজিস্ট্রি অফিসে আগুণ লেগে গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও রেকর্ডপত্র পুড়ে যায়। এরপর থেকে একটি চক্র জালজালিয়াতির মাধ্যমে দলিল বানিয়ে তা বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করে চলেছে।
এ ব্যাপারে বার বার চেষ্টা করেও দলিল দাতা সিরাজুল ইসলাম ও গ্রহীতা রবিন রাজন সাখাওয়াতের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ভালুকা সাবরেজিস্ট্রার শাহ জালাল মোল্লা দলিল রেজিস্ট্রির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দলিল রেজিস্ট্রির ব্যাপারে যা যা কাগজপত্র দরকার, সবই ঠিকঠাক মনে হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার