বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নয়ন হয়নি। বরং আরো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার ৫৪ সেন্টিমিটার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার ৫৮ সেঃ মিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে আরো ১০ টি এলাকায় পানি উঠেছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত থাকায় সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ৫ শতাধিক পরিবার গৃহ হারিয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষরা গৃহ হারিয়ে এখন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। এদের মধ্যে অনেকে বসতবাড়ীর অংশ ভেঙে নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দির কুতুবপুর, চন্দনবাইশা এবং কামালপুর ইউনিয়ন ও বয়রাকান্দি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বুধবার পর্যন্ত এসব ইউনিয়নে কমপক্ষে ২০টি গ্রামে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার পানি বৃদ্ধির কারণে আরো নতুন করে ১০টি এলাকায় পানি উঠতে দেখা গেছে। নতুন করে প্লাবিত হওয়ার ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে বানভাসিরা। বগুড়ার ৩ উপজেলা সারিয়াকান্দি সোনাতলা ও ধুনটের ৯২ টি গ্রামের প্রায় ৭২ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত্র হয়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলা। এখানে বন্যাকবলিত হয়েছে ৫৮টি গ্রামের ১১ হাজার ৭শ’২০টি পরিবার। বন্যার্তদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আশ্রয় নেয়া লোকজনের সংখ্যা।
এদিকে আকষ্মিক ভাবে সারিয়াকান্দির চরবেষ্টিত ইউনিয়নের ৩টিতে তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। হাটশেরপুর, চালুয়াবাড়ি ও বোহাইল ইউনিয়েনের কয়েকটি গ্রাম নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। এর মধ্যে হাটশেরপুর ইউনিয়নের চকরতিনাথ ও করমজাপাড়া ও দীঘাপাড়া চরে নদী ভাঙ্গনের ফলে দুইশতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি ও মালামাল রক্ষা করতে পারেনি।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাট শেরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, ১৭ ঘন্টার মধ্যে ১৪৩টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু পরিবার বাড়িঘর থেকে মালামাল সরাতে পারেনি। বেশির ভাগ লোকজন বাড়ি ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। আশ্রয় নিচ্ছে বাঁধ বা স্বজনের বাসায়। এছাড়া, বেড়াপাঁচবাড়িয়া, উত্তর টেংরাকুড়া, পাকুড়িযা ও চরঘাঁগুয়া এলাকায় নদী ভাঙনের কারণে শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়া লোকজন তাদের ঘরবাড়ী ও মালামাল অন্যত্রে সরিয়ে নিচ্ছে। আবার নৌকা ও লোকজনের অভাবে অনেকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে মালামালও সরাতে পারছেনা।
বগুড়া জেলা ত্রান অফিস জানিয়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের ৩টি গ্রামসহ চালুয়াবাড়ী, বোহাইল ইউপির চরাঞ্চলের ৫শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে। চরাঞ্চলে পানি উঠায় এসব এলাকার লোকজন বাড়ীঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, বন্যা কবলিত এলাকায় সরকার বরাদ্দ প্রদান করেছে। ইতিমধ্যেই ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় ত্রান সামগ্রী বিতরণ হয়েছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, বুধবার ৫৪ সেন্টিমিটার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার যমুনা নদীর পানি বিপদ সীমার ৫৮ সেঃ মিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিছু নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।
এদিকে, বগুড়ার ধুনট উপজেলায় পানি বৃদ্ধির সাথে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের দূর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরের ঘরবাড়ীতে পানি প্রবেশ করেছে। এসব কিছু পরিবার ঘর ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। এখনো অসংখ্য পরিবার পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন