সিরাজগঞ্জে যমুনা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। পানিবন্দী মানুষের কর্ম না থাকায় চরম কষ্টে দিন যাপন করছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। সরকারী ত্রাণ বিতরণ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত অনেক জায়গা তা পৌঁছায়নি।
এ পর্যন্ত জেলার ৫টি উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের ২২৪ টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৪১ হাজার পরিবারের প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রায় ৫ শতাধিক বসতবাড়ি সম্পূর্ণ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অসহায় মানুষগুলো ওয়াপধাঁর ঢালে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
যমুনার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে আভ্যন্তরীন নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের ফসলী জমি, রাস্তাঘাট, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের ব্রাহ্মনবয়ড়া, শৈলাবাড়ী গ্রামের পানিবন্দি আফসার, জলিল, সুমী খাতুন জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থাকলেও ত্রাণ সহায়তা তো দুরের কথা এলাকার জনপ্রতিনিধিরা তাদের খোঁজ খবর নেয়নি। কাজকর্ম না থাকায় চরম কষ্টে দিনাতিপাতি করছি।
এদিকে, পানি বাড়ার সাথে সাথে শাহজাদপুরের হাটপাচিল, সদরের বাহুকা, কাজিপুরের শুভগাছা টুটুলের মোড় ও মাছুয়াকান্দিতে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকায় কয়েক শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পাউবো ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা না নেয়ায় নদীতীরের মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, দুপুরে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। তবে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙ্গনের বিষয়ে বলেন, ফান্ড না থাকায় ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা গ্রহন করা যাচ্ছে না।
জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় আরও প্রায় ৩০টি গ্রাম নতুন করে প্লাাবিত হয়েছে। এ নিয়ে ৫ উপজেলার ২২৪টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এসব গ্রামের প্রায় ৪১ হাজার পরিবারের প্রায় দু’লক্ষ মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে বন্যার্তদের মধ্যে ১১৮ মেট্টিক টন চাল ও ৩ লাথ ৩৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। মজুদ রয়েছে আরও ২৩১ মেট্টিক টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা।
জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা জানান, বন্যা মোকাবেলা প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসন। বন্যা কবলিতদের জন্য ১৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। মজুদ রয়েছে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তায়ও। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সরকারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকার সকল সরকারী কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন