দীর্ঘ ৭ বছর ধরে বিভিন্ন দফতরে চেষ্টা করেও কোন ফল পাননি ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আলী (৭০)। ঠিকানা বদল করতে একাধিক মন্ত্রীর সুপারিশ থাকলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ফলে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলতে গিয়ে তাকে হয়রানীসহ নানা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।
কোন উপায় না পেয়ে অবশেষে সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হন এই অসহায় মুক্তিযোদ্ধা। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বাড়ইডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আলী কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, বাড়ইডাঙ্গা গ্রাম ছেড়ে তার পিতা কাজের সন্ধানে ১৯৫০ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা উপজেলার দর্শনায় চলে যান। সে সময় তিনিও বাবার সাথে জন্মস্থান ছেড়ে সেখানে যান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ৮নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেন। যুদ্ধ শেষে তিনি দর্শনার ঠিকানায় মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র গ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তালিকা নং-৫০৯২২। ২০০৫ সালে প্রকাশিত গেজেটেও তার নাম রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক তার সামরিক সনদ নং-১৪০১৯৭।
ইউনুস আলী জানান, তিনি ২০০৯ সাল থেকে নিয়মিত ভাতা পেতে শুরু করেন। সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা শাখা হতে ভাতা উত্তোলন করতেন। কিন্তু পারিবারিক কারণে সে তার জন্মস্থান ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বাড়ইগ্রামে চলে আসে। বর্তমানে তিনি স্বপরিবারে এখানেই বসবাস করছেন। ফলে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলতে চুয়াডাঙ্গায় যেতে হয়। এতে বিভিন্ন রকম কষ্ট ছাড়াও অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়।
এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলায় না থাকার কারণে সেখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে ঠিকানা পরিবর্তন করে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ঠিকানায় তালিকাভুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেন। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন দফতরে শুধু ধর্নাই দিয়ে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন দফতরের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের জোর সুপারিশ থাকা সত্বেও আজ পর্যন্ত ঠিকানা পরিবর্তনের কোন সুরাহা হয়নি। ইউনুস আলী বলেন, বয়সের কারণে আমি এখন তেমন একটা হাটাচলা করতে পারিনা। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা দিয়েই কোন রকমে সংসার চালাই। ভাতা তুলতে গিয়ে নানা রকম হয়রানীর শিকার হই, তাছাড়া ফরিদপুর থেকে চুয়াডাঙ্গায় গিয়ে ভাতা তুলতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। আমি চাই ঠিকানা পরিবর্তন করে ফরিদপুরের ভাঙ্গার ঠিকানায় যাতে ভাতা তুলতে পারি সে ব্যবস্থা করা হোক। এজন্য তিনি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে একসময় কেঁদে ফেলেন ইউনুস আলী ও তার স্ত্রী লুৎফন নাহার।
বিডি প্রতিদিন/২৪ জুলাই ২০১৭/হিমেল