দীর্ঘ ২মাসেও পুনর্বাসন হয়নি রাঙামাটির পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরবিারগুলোর। এখনো অনেকের আশ্রয় কেন্দ্রে কাটছে দিন। ভিটে মাটি হারিয়ে সেই পরিবারগুলো খবর রাখেনি কেউ। তবে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হলেও তার বিন্দু মাত্র বাস্তবায়ন দেখেনি বলে অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
অন্যদিকে রাঙামাটিতে গত তিনদিন ধরে আবারও টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তাই ফের পাহাড়ধসের আশঙ্কা বাড়ছে রাঙামাটিতে। আতঙ্কে এলাকার ছাড়ছে মানুষ। ভেঙ্গে পরছে পাহাড়ে মাটি। মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি-বান্দরবান সড়ক। ভারি বর্ষণে সড়কের উপর আচরে পরছে পাহাড়ে মাটি। মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও। এর ফলে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক । উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন পার করছে স্থানীয়রা। তাই ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে সতর্কবার্তা জারি রেখেছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।
সম্প্রতি রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনার পর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রকাশ করেছিল জেলা প্রশাসন। সেই তালিকায় বলা হয়, রাঙামাটি ১০টি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হচ্ছে ১২হাজার ৫৫৮টি। তার মধ্যে সম্পন্ন বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ির হচ্ছে এক হাজার ২৩১টি। আর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৯হাজার ৫৩৭টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-বন, বিদ্যুৎ, শিল্প কারখানা, মৎস্য খামার, গবাদি পশু. হাঁস মুরগি। এছাড়া বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমিও। যার পরিমাণ ১৮হাজার ৯৯.৩১ হেক্টর। তবে এ ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। তাই পুনর্বাসন করা হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর।
জানা গেছে, রাঙামাটিতে দুর্যোগের সময় ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা থাকলেও এখন আছে মাত্র ৫টি। তাই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে লোক সংখ্যও কমে এসেছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে নিকট আত্মীয় ও ভাড়া বাসায় উঠেছে। কিন্তু যাদের একেবারে কিছুই নেই, তারা এখনো আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রয়ে গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার সর্বারহ অব্যাহত রেখেছে। তাদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা।
রাঙামাটি জিমনেসিয়াম আশ্রয় কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর টিম লিডার জীবন বসু চাকমা বলেন, "পাহাড় ধসে সব হারিয়ে দীর্ঘ ২মাস ধরে আমি এবং অনেকেগুলো পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছি। জানিনা আর কতদিন থাকবো। কারণ এখনো অনিশ্চিত আমাদের পুর্নাবাসন। সরকার আধও আমাদের পুর্নাবাসন করবেন কি না। করলেও কোথায় করবে। এবিষয়ে রয়েছে নানা শঙ্কা। অনেক কষ্টে সবাই আশ্রয় কেন্দ্র দিন কাটাছি।"
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান জানান, ক্ষয়ক্ষতির এ হিসাব চূড়ান্ত নয়। যদিও প্রাথমিকভাবে নিরূপণ করা খসড়া এর মধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বিস্তারিত তথ্য আরও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। চূড়ান্ত হিসাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে-কমতে পারে। চূড়ান্ত তালিকা আবার সরকারের কাছে পাঠানো হবে। যে সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এখনো আশ্রয় কেন্দ্র আছেন তাদের খাবারসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া পুনর্বাসন কাজের প্রক্রিয়া চলছে। খুব দ্রুত তাদের পুনর্বাসন করা হবে।
এদিকে এখনো স্বাভাবিক হয়নি রাঙামাটি জনজীবন। গত শুক্রবার থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাঙামাটি। তাই ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষের। দেখা দিয়েছে খাবার পানি সংকট। একের পর এক দুর্যোগের শেষ নেই যেন রাঙামাটিতে। ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে রাঙামাটির পর্যটন কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, শনিবার টানা বর্ষণে রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের আকর্ষনীয় ঝুলন্ত সেতুটি প্রায় ২০ইঞ্চি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পর্যটক ও স্থানীয়দের সেতুর উপর চলাচলের উপর নিষেজ্ঞা জাড়ি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩জুন রাঙামাটি ভয়াবহ পাহাড় ধসে প্রাণ গেলো ১২০ জনের। এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ১৭টি পরিবার। আহত হয়েছিল শতাধিক মানুষ। সেদিন রাঙামাটি শহরসহ জেলাজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় পরিনত হয়েছিল ধ্বংসযজ্ঞে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষ সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও এখনো ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে অগণিত মানুষ।
বিডি প্রতিদিন / ১২ আগস্ট, ২০১৭ / তাফসীর