উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নওগাঁয় নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে পানি কমতে শুরু করলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণ কাজে জড়িত খামারীরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন পড়েছে। আর মাত্র ২ দিন পর কোরবানীর ঈদ। কিন্তু এখন পর্যন্ত খামারের গরু বিক্রি শুরু হয়নি।
অথচ গত বছর ঈদের আগে এই সময়ে খামার থেকে অর্ধেক পরিমান গরু বিক্রি হয়েছিল বলে খামারিরা জানান। এখন পর্যন্ত জেলার বাহির হতে কোন ব্যাপারীও আসেনি। এদিকে বন্যার কারণে গবাদী পশুর খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় একদিকে পালিত গরুর খরচ বাড়ছে আর অন্যদিকে কোরবানির ঈদে তাদের লালন পালনকৃত গরুগুলোর ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খামারিরা।
তবে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শঙ্কিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কোরবানির ঈদ আসতে এখনো ২ দিন সময় আছে। ততদিনে বন্যার পানি নেমে যাবে। আর পানি নেমে গেলেই জেলার বাহির থেকে পাইকার আসা শুরু করবে। তখন গরুর দাম বৃদ্ধি পাবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলে প্রায় ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ৪শ' গবাদি পশু রয়েছে। এর মধ্যে কোরবানির উপযোগী গবাদি পশু রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫শ'। এর বিপরীতে জেলায় চাহিদা মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার। অর্ধেকেরও বেশী গবাদী পশু জেলার বাহিরে সরবরাহ হবে।
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল গ্রামের মেসার্স ইউনাইটেড ডেইরী ফার্মের মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে আমার খামারে ৩০টি গরু পালন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রতিটি গরুর মূল্য ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কম হাঁকা হচ্ছে। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বন্যার কারণে গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তা চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। এতে করে একেকটি গরুর বিপরীতে গত ৬ মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে খামারেই মাঝারি আকারের গরু প্রতি মূল্য দাড়াচ্ছে ৫০ খেকে ৫৫ হাজার টাকা।
জেলার রানীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের প্রামানিক ডেইরী ফার্মে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে ২০টি গরু পালন করা হয়েছে। ওই ফার্মের মালিক দেলোয়ার হোসেন জানান, গত ঈদে ১০টি গরু বিক্রি করে তার প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ হয়েছিলো। কিন্তু এবার তিনি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। একই কথা বলেন পাশের খামারি হাসেম আলী।
এদিকে স্থানীয় হাটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরম মন্দাভাব চলছে গবাদি পশু বেচা-কেনায়। বন্যার কারণে হাটগুলোতে পাইকারী ব্যবসায়ীরা আসছেন না। ফলে আমদানী থাকলেও বেচা-কেনায় মন্দা ভাব চলছে।
জেলায় গবাদিপশু বেচা-কেনার সবচেয়ে বড় হাট সাপাহারের দীঘির হাটে গরু বিক্রি করতে এসে স্থানীয় আব্দুল খালেক জানান, মাঝারি একেকটি গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। বড় গরুর দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। হাটগুলোতে যে দু’একজন স্থানীয় ব্যাপারী আসছেন তারাও গত বছরের তুলনায় এবার গরু প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা কম বলছেন।
জেলার সাপাহার হাটে গরু বিক্রি করতে আসা এনামূল হক বলেন, আমর গরুটির খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। অথচ ৪২ হাজার টাকার উপর এখনো কেউ দাম বলেনি। অপর বিক্রেতা আইজার রহমান বলেন, তিন মাস আগে আমি গরুটি ৩৫ হাজার টাকায় কিনে মোটাতাজা করছি। অথচ আজ দাম বলছে ৩০ হাজার টাকা। তিনি বলেন এবার যদি ভারতীয় গরু প্রবেশ করে তাহলে আমরা মাঠে মারা যাব।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: উত্তম কুমার দাস বলেন, চারিদিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই কোরবানীর হাটগুলো জমে উঠবে। ঐ সময় খামারিরা গরুর নায্যমূল্যে পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিডি প্রতিদিন/৩০ আগস্ট ২০১৭/হিমেল