বন্যার প্রভাব পড়েছে নওগাঁর কামার পল্লীতে। বিগত বছরগুলোতে মাসখানেক আগ থেকে কামারদের ব্যস্ততা থাকলেও এবার তার ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে। কিছুটা অলস সময় পারছেন তারা।
জানা যায়, বছরের ১১ মাস তেমন কাজ থাকে না কামারদের। কোরবানির ঈদ আসলে সারা বছরের কাজে এক মাসেই তা পুশিয়ে নেন তারা। ঈদের কারণে রাতদিন ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। এ সময়টাতে কামারের দোকানগুলো কর্মচারির সংখ্যাও বেশি দেখা যায়। তা
নওগাঁ সদর উপজেলার শিবপুর এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, টুংটাং শব্দে সরগম হয়ে উঠেছে কামারপাড়াগুলো। হাপরের হাঁসফাঁসে আগুনের শিখায় লোহাকে পুড়িয়ে প্রজল্লিত করা হচ্ছে। হাতুড়ির পিটুনিতে লোহা থেকে স্ফুলিঙ্গ ছড়াচ্ছে। তৈরী করা হচ্ছে পশু কোরবানির পাশাপাশি মাংস কাটার ছুরি, দা, বঁটি ও চাপাতি। এসব কিনতে এখন কামারের দোকানে ছুটছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে লোহা কিনে পশু জবাইয়ের বিভিন্ন জিনিস তৈরী করছেন। আবার অনেকে রেডিমেট কিনছেন। আবার অনেকে পুরনো যন্ত্রপাতি ঝালাই এবং সান দেয়ার জন্য কামারদের কাছে যাচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, লোহার মানভেদে হাড়কাটি (চাপাতি) ৩৫০-৪০০ টাকা, পশু জবাইয়ের বিশেষ ছুরি ৪০০-৬০০ টাকা, চামড়া ছড়ানো ছুরি ৮০-১০০ টাকা, দা ৪০০-৪৫০ টাকা, বঁটি ৩৫০-৫০০ টাকা, হাতা ৬০-৭০ টাকা, কুড়াল ৫০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হয়। এসব সরঞ্জাম তৈরীতে স্প্রিং লোহা (পাকা লোহা) ও কাঁচা লোহা ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভাল এবং দামও বেশী। আর কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের দাম তুলনামূলক কম।
এছাড়া এঙ্গেল, রড, রেল লাইনের লোহা ও গাড়ির পাত ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। অপরদিকে কোরবানির ঈদে মাংস কাটার জন্য দা-ছুরির পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাঠের গুড়ি বা কুন্দা বিক্রি হচ্ছে শহরের বিভিন্ন স্থানে। এমনকি ভ্রাম্যমাণভাবে ভ্যানে নিয়ে ঘুরে ঘুরেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। সারা দেশে এর চাহিদা ব্যাপক। শক্ত গাছে বিভিন্ন সাইজের প্রতিটি কুন্দা ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যবাসয়ীরা।
নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের সাজেদুর রহমান বলেন, ঈদ কাছাকাছি আসলে কামারদের দোকানে প্রচুর ভীড় থাকে। ভীড়ের মধ্যে তেমন কাজও ভাল হয় না। কোন মতে ডেলিভারি দিতে পারলেই বাঁচে। তাই পুরনো যন্ত্রপাতি একটু আগেই ঝালাই ও সান দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছেন।
কারিগর বিধান চন্দ্র বলেন, ঈদের ১৫ দিন আগ থেকে এতোই ব্যস্ত থাকতে হতো যে নাওয়া খাওয়ার সময় পাওয়া যেতনা। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করতে হতো। প্রতিদিন ৩৫০ টাকা মজুরি পেতাম। কিন্তু এ বছর বন্যার কারণে সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার শিবপুর এলাকার কারিগর আনন্দ কর্মকার বলেন, কোরবানি ঈদে যেখানে একমাস আগ থেকে ব্যস্ত থাকতে হতো এবার তার ব্যতিক্রম। বন্যার কারণে আমাদের কাজের তেমন চাপ না থাকলেও শেষ সময়ের দিকে এসে ব্যস্ততা বেড়েছে। অপরদিকে কয়লা সংকট দেখা দিয়েছে বন্যার কারণে। ফলে কয়লার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লোহার সরঞ্জাম তৈরিতে কিছুটা ব্যয় বেড়েছে।
বিডি প্রতিদিন/৩০ আগস্ট ২০১৭/হিমেল