ষষ্ঠ দিনেও বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামেনি। আজও ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এসব শরণার্থী মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে আজ বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত উখিয়ার কুতুপালং অস্থায়ী (অননুমোদিত) শরণার্থী শিবির, টেকনাফের ল্যাদা ও নয়াবাজার মুছনী শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। একই সাথে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অন্তত ১৫ থেকে ২০টি রোহিঙ্গা পাড়ায় সেখানকার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনাবাহিনী নতুন করে আগুন দিয়েছে।
নাফ নদীর টেকনাফ সীমান্তের এপার থেকে ওপারের বিভীষিকাময় আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলি প্রত্যক্ষ করা গেছে। সকালে একটি হেলিকপ্টার থেকে মায়ানমারের আকাশ সীমান্তে ছোটছোট ককটেল বোমা ফেলে রোহিঙ্গা পাড়াগুলোতে আগুন দেওয়া হয় বলে টেকনাফের ল্যাদা ও মুছনী শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া নতুন ও পুরাতন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জানান। তাই নাফনদীর ওপারে যেমন সহিংসতার আগুন চোখে পড়েছে, এপারে দেখা গেছে দিশেহারা শরনার্থীদের ঢল।
মায়ানমারের মণ্ডু শহরের নোয়াপাড়া ৫ নম্বও ওয়ার্ডেও সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবদুল হাকিমসহ কয়েকজন দায়িত্বশীল রোহিঙ্গা সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে নতুন কওে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে জাম্বুন্যা পাড়া, বালুখালী, ফুপখালী, কাউয়ার বিল, ফখালী, মগনামার বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা পাড়া। এ সময় তাদেও অনেক আত্মীয় স্বজন আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া এবং বিজিপির নির্মম সহিংসতার শিকার হন বলে জানা গেছে। এর আগে গত সোমবার ও মঙ্গলবার টেকনাফ সীমান্তের রাখাইন রাজ্যের ভুছিঢং ও রাছিঢং এলাকার শীলখালী, আলতাং, কুল্লং, খোয়াইংডং, মেরুল্যা, ছমুন্যাপাড়া, রাজার বিল, পাদংছা, গদুছড়াসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত পাড়াগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান মায়ানমারের সাবেক এই ইউপি সদস্য।
এদিকে টেকনাফের ল্যাদা ও মুছনী অস্থায়ী শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদেও কেউ কেউ তাদেও পূর্ব পরিচিত পুরনো শরণার্থীদের শিবিরে আশ্রয় নিলেও এখনও অনেককে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সরেজমিন জানা যায়, গতকাল টেকনাফের ল্যাদা, মুছনী ও বালুখালী ক্যাম্পে নতুন কওে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা। এই দুটি ক্যাম্পে সরকারি রেজিষ্ট্রার্ট শরণার্থী রয়েছে যথাক্রমে ৫০ হাজার ও ১৮ হাজার।
অন্যদিকে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে ১০ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দালালদের হাত ধওে এসব শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে বান্দরবান সীমান্তের আমতলী, ফকিরা বাজার, পুরানমাইজ্যা ও উখিয়ার বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালীসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে অবাধেই অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
অন্যদিকে ঘুমধুমের জলপাইতলী ও তমব্রু সীমান্তে বিজিবির কর্ডনে থাকা প্রায় তিন সহস্রাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী এখন সীমান্তের জিরো পয়েন্টেই রয়ে গেছে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে তারা নিদারুণ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে পালংখালী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল আবছার চৌধুরী জানান, দালালদের কারণেই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বেশি হচ্ছে। তাদের হাতে নানাভাবে রোহিঙ্গারা হয়রানির শিকারও হচ্ছেন বলে জানান তিনি। এছাড়া স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ পাওয়া যায়, নির্মম ও সহিংস পরিস্থিতির শিকার রোহিঙ্গা শরণার্থীরা পুলিশ ও বিজিবির কতিপয় অসাধু সদস্য কর্তৃকও নিযার্তন এবং হয়রানির শিকার হচ্ছে। শরণার্থীদেও কাছে থাকা মোবাই ফোন ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে কেউ কেউ তাদেও অনুপ্রবেশে সহায়তা করছে বলে জানা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার