যমুনার পানি কমলেও ভাঙ্গন কমছে না। তীব্র ভাঙ্গনে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার হাজার হাজার মানুষের বসতভিটা, ফসলি জমিসহ শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ফলে এক সময়ের বিত্তবান মুহুর্তেই হয়ে যাচ্ছে ভুমিহীন নিঃস্ব। চোখের সামনে বিলীন হয়ে যাওয়ার এমন করুণ দৃশ্য দেখে চোখের জল ফেলা ছাড়া কোন কিছুই তাদের করার নেই।
সরেজমিনে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এনায়েতপুর থানা সদরের ব্রাহ্মনগ্রাম থেকে পাঁচিল পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা ও চৌহালীর চরসলিমাবাদে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে সাতটি গ্রামের তিন শতাধিক ঘর-বাড়ি, দু'টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাঁচটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও তাঁত কারখানাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে ভাঙ্গন কবলিতরা। নিজম্ব জমিজমা ও টাকা পয়সা না থাকায় অনেকে খোলা আকাশের নীচে বাস করছে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।
আনোয়ারা খাতুন জানান, চোখের সামনে সব কিছু নদীতে চলে গেছে। এখন কোথায় যাবো, কি করবো? সরকারীভাবেও কোন সহায়তা দেয়া হচ্ছে না। খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছি। আরেক বৃদ্ধা জানান, ঘরবাড়ী ঝুপড়ি তুলে নদীর পারেই রেখেছি। রোদ-বৃষ্টিতে অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। টাকা পয়সা না থাকায় কোথাও নিয়ে যেতে পারছি না। একই অবস্থায় সাতটি গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ও রাজসহ অনেকে জানান, ভাঙ্গনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এখনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে বৃহত্তর কাপড়েরর হাট, এনায়েতপুর থানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ হাজার হাজার বসতভিটা ও তাঁত কারখানা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার কাছে দ্রুত ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এখনো ভাঙ্গনরোধে কাজ শুরু করা হয়নি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ৮৫ হাজার জিওব্যাগ ফেলার অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রক্ষায় কাজ শুরু করা হবে।
তিনি আরও জানান, ভাঙ্গন ব্যাপক আকার হওয়ায় জিওব্যাগ ফেলেও ভাঙ্গন রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এ জন্য স্থায়ী বাঁধ দেয়ার জন্য প্রকল্প গ্রহনের প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এলাকাগুলো নদীভাঙ্গন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১১ অক্টোবর, ২০১৭/ ওয়াসিফ