অবশেষে দরিদ্র শিশু, বাদাম বিক্রেতা আসমার দায়িত্ব নিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক বেগম উম্মে সালমা তানজিয়া। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক তার কার্যালয়ে ডেকে নেন আসমা ও তার পরিবারের সদস্যদের। এসময় তিনি শিশু আসমাকে মাতৃস্নেহে জড়িয়ে ধরেন।
জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া আসমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করেন, ‘মা, তুমি পড়ালেখা করে বড় হয়ে কি হতে চাও’- আসমার তাৎক্ষনিক জবাব, আমি ডাক্তার হমু। জেলা প্রশাসক আসমার মা বেদেনা বেগমকে বলেন, মেয়েকে আর ‘বাদাম’ বিক্রি করতে পাঠানো যাবে না। আজ থেকে আসমার পড়ালেখার সকল দায়িত্ব আমি নিয়ে নিলাম। পাশে থাকা আসমার ভাই মিলনেরও পড়ালেখার দায়িত্ব নেন তিনি। মিলন শহরের একটি চায়ের দোকানে কাজ করতো। দু’ ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নেবার কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শিশু আসমা-মিলনের মা বেদেনা বেগম। এসময় বেদেনা বেগম জেলা প্রশাসকের জন্য দোয়া করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শহরের আলীপুর বাদামতলী এলাকায় দু ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকতো কাসেম শেখ ও বেদেনা বেগম। গত রোজার আগে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন কাসেম শেখ। এরপর এ পরিবারটির উপর দুর্যোগ নেমে আসে। কোন উপায়ন্তর না দেখে কাসেম শেখের স্ত্রী বেদেনা বেগম নিজে বাসা বাড়ীতে কাজ নেন। ৮ বছরের ছেলেকে দেন একটি চায়ের দোকানে। নিজে এবং ছেলের সামান্য আয় দিয়েই চলছিল তাদের সংসার কোন রকমে। এদিকে, আসমা (১২) পড়ালেখা করছিল স্থানীয় বাদামতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে। সংসারের হাল ধরতে শিশু আসমা পড়ালেখার পাশাপাশি ‘বাদাম’ বিক্রি শুরু করে। স্কুল থেকে ফেরার পর ‘বাদাম’ নিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়। বেশীর ভাগ সময় আসমা ‘বাদাম’ বিক্রি করেন ফরিদপুর প্রেসক্লাব এলাকা, সুপার মার্কেট, শিশু হাসপাতালের সামনে। প্রতিদিন ‘বাদাম’ বিক্রি করে ৩০/৪০ টাকা লাভ হয় তার। এদিয়েই সংসারের কিছুটা খরচ ও নিজের লেখাপড়ার বই-খাতা কিনেন। আসমার ‘বাদাম’বিক্রি করে পড়ালেখার বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় বিজয় পোদ্দার নামের এক সাংবাদিকের। সে নিজের অর্থে আসমাকে খাবার, বই-খাতা কিনে দেন। এ নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ হলে দৃষ্টি কাড়ে জেলা প্রশাসকের। জেলা প্রশাসক আসমা-মিলনের সকল দায়িত্ব নিয়ে বলেন, আজ থেকে দু শিশুর সকল দায়িত্ব আমার। তিনি তাৎক্ষণিক আসমার মায়ের হাতে নগদ দুই হাজার টাকা তুলে দেন। এসময় স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ছাড়াও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শিশু আসমা সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে, ‘অহন আমি ইস্কুলে যামু, পড়ালেখা ঠিক মতন করতে পারুম, অহন আর বাদাম বেচা লাগবো না। তয় আমার বাবারে আফনেরা খুঁইজ্যা দেন। বাবার লাগি মনডা কান্দে’।
জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, সমাজে এখনো অনেক শিশু আছে যারা কাজ করার পাশাপাশি পড়ালেখা করে। একসময় সংসারের কারণে তাদের পড়ালেখা আর হয়না। আমরা যদি এমন শিশুদের কিছুটা দায়িত্ব নিতে পারি তাহলে এসব অসহায় দরিদ্র শিশুরা পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন