বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর কাস্টমস এর আরোপিত শর্ত মানতে রাজি না হবার কারণে গত রবিবার থেকে এই বন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ীরা। ফলে অচল হয়ে পড়েছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। কাস্টমস আইনের শর্তানুযায়ী আমদানি করা মালামাল প্রথমত স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে রাখার নিয়ম থাকলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের আমদানিকৃত পাথর বন্দর প্রক্রিয়া শেষ করে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড এর নির্ধারিত সীমানার মধ্যে আনলোড করে আসছে। গত ১ নভেম্বর একটি পাথরবোঝই ট্রাকে অবৈধভাবে ২০ টন মোটর যন্ত্রাংশ পাচার করার সময় বাংলাবান্ধা বিজিবির হাতে ধরা পড়ে। ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে এই মালামাল পাচারের ঘটনা নিয়ে বন্দরে তোলপাড় শুরু হলে কাস্টমস কতৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের ইয়ার্ডে মালামাল আনলোড করার নির্দেশনা দেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কাস্টমসের এই নির্দেশনাকে বাস্তব সম্মত নয় এমন অভিযোগে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দেয়।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বন্দরের বাইরে মালামাল আনলোড করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাইরে মালামাল আনলোডের সুযোগ নিয়ে অনেক ব্যাবসায়ীই অবৈধ আমদানী কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত হচ্ছেন।
এদিকে এই বন্দর দিয়ে অবৈধভাবে ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা মূল্যের ২০ টন গাড়ির যন্ত্রাংশ (লোড স্প্রিং) আটকের ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলা ও গাফিলতির জন্য কাস্টমসের দুই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই দুই কর্মকর্তা হলো রাজস্ব কর্মকর্তা ফিরোজ আলমকে ভ্যাট সার্কেলে এবং পরিদর্শক আব্দুল হাকিমকে ঠাকুরগাঁও সার্কেলে বদলি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত ২ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এর বিরুদ্ধে তেঁতুলিয়া থানায় মামলা হলে আদালত ভারতীয় ট্রাক চালককে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
এ ঘটনার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস এবং বিজিবিসহ ভারতীয় কাস্টমস আলোচনায় বসে। এই অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তদন্ত টিম গঠন করা হয়। বন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার সহ আমদানিকৃত সকল মালামাল বন্দর ইয়ার্ডে আনলোড করার শর্ত আরোপিত করে বন্দর কাস্টমস। কিন্তু এই শর্ত মানতে নারাজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারকরা জানায়, বন্দরে ভিতর পাথর আনলোড করে কাস্টমস যাচাই হওয়ার পর আবারো লোড করে ব্যবসায়ীদের আড়তে পাথর স্থানান্তর করতে পরিবহন খরচসহ অবকাঠামগত সমস্যা বাড়বে। ফলে লোকশানে পড়বে ব্যাবসায়ীরা। তাই কোন ভাবেই বন্দর কাস্টমস এর এই শর্ত মানবে না তারা। প্রয়োজনে আমদানিকারকরা এই বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি বন্ধ রাখবে।
বাংলাবান্ধা কাস্টমস এর রাজস্ব কর্মকর্তা বজলুর রশীদ জানান, বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে এই সীদ্ধান্ত আরোপিত করা হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে এটি বলবৎ থাকবে, মানা না মানা ব্যববসায়ীদের বিষয়।
এদিকে, গত ৫ নভেম্বর অবৈধ যন্ত্রাংশ আমদানি ঘটনা তদন্তে এসে বিতর্ক তৈরি করেছেন রংপুর কাস্টমস এক্সারসাইজ ও ভ্যাট সার্কেলের সহকারি কমিশনার রিজভি আহমেদ। তদন্তের জন্য সকালে তার বন্দরে পৌঁছানোর কথা থাকলেও তিনি অজ্ঞাত কারণে স্থল বন্দরে সরেজমিনে না গিয়ে দিনভর রওশনপুর আনন্দ ধারায় সময় কাটান। তার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যবসায়ী ও সিএন্ডএফ ও পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা অপেক্ষা করলেও কোন আলোচনা ছাড়াই তাদের ফিরে আসতে হয়।
এদিকে ভুটান ও ইন্ডিয়ার প্রায় শতাধিক পাথর বোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করলেও আমদানিকারকরা তা বন্দরে আনলোড করেনি। ফলে এই ট্রাকগুলো বন্দরে আটকে পড়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি অনিয়ম ফ্রি স্টাইলে চলে আসছিল। পণ্য আমদানিতে একের পর এক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর আগে ২০১৬ সালে পঞ্চগড়ের এক সিএন্ড এফ এজেন্ট কর্তৃক ভুয়া এলসি খুলে ও ভুয়া এনওসির মাধ্যমে ১১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার সুতা কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর দুদক একটি মামলা করে। ২০১৪ সালে প্রায় ১৫ কোটি টাকার সাইকেল পার্স অবৈধভাবে আমদানির সময় বিজিবি আটক করে। এঘটনাও মামলা হয়। আর এবার পাথর আমদানির নামে পাথরের ট্রাকের চালানে ২ কোটি ১৪ লাখ টাকার মূল্যের গাড়ির যন্ত্রাংশ চোরাচালানের চালান ধরা পড়লো।
এসব ব্যাপারে কোন প্রকার কথা বলতে রাজি হননি কাস্টমস কতৃপক্ষ।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ নভেম্বর, ২০১৭/মাহবুব