জেলার নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়নের দামদরদী গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী মান্নান ফকিরের ৫ শতাংশ জমি দখল করে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি ঘর তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যেই জায়গা দখল করে সেখানে থাকা তিনশ' বাঁশ, বেশকিছু মেহগনি, গাব গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। জমি দখলে বাঁধা প্রদান করা হলে প্রতিবন্ধী পরিবারটিকে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেয়া হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান মান্নান ফকির। চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেবার কারণে তাকে নানা ভাবে হয়রানী করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চরযশোরদী ইউনিয়নের দামদরদী গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী মান্নান ফকির কৃষিকাজ করে সংসার চালান। মান্নান ফকিরের ৫ শতাংশ জমির উপর দৃষ্টি পড়ে গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মী বাবলু মাতুব্বরের। মান্নান ফকিরের সেই ৫ শতাংশ জমিটি ১৫ বছর আগে জনৈক কমেলা বেগমের কাছ থেকে কিনে নেন এমন কথা বলে গত কয়েকদিন আগে দখল করেন বাবলু মাতুব্বর।
জমি দখলে সহযোগীতা করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা লাভলু মাতুব্বর। জমি দখলের পর সেখানে থাকা ২শ' ৭৩টি বাঁশ কেটে নিয়ে বিক্রি করে দেয় বাবলু মাতুব্বর। এছাড়া গত কয়েকদিনে ৮টি মেহগনি ও ৪টি গাব গাছ কেটে নেয়া হয়। শুধু গাছ কেটে নেয়াই নয়, দখলকৃত জমিতে ঘর তৈরীর কাজও করছেন বাবলু মাতুব্বর।
জমি দখল নিয়ে প্রতিবন্ধী মান্নান ফকির বাঁধা দিলে তাকে মারধরও করা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ গ্রাম্য মাতুব্বরদের কাছে বিচার দেয়া হলেও তারা অসহায় প্রতিবন্ধী মান্নান ফকিরের জন্য কিছুই করেননি।
মান্নান ফকির বলেন, তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার দুই ছেলের মধ্যে ১ জন প্রতিবন্ধী। কৃষিকাজ করে কোন রকমে সংসার চালান। তার ৫ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালী বাবলু মাতুব্বর। বাবলু মাতুব্বর জমিটি কিনে নিয়েছেন বলে দাবি করলেও তার কাছে দলিল নেই। তিনি জাল দলিল তৈরী করে জমিটি হাতিয়ে নেবার চেষ্টা করছেন। যার কারণে আদালতে করা মামলায় তারা হেরে যান।
তিনি আরো বলেন, বাবলু মাতুব্বর আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে আমাকে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে। আমি আমার জায়গায় গেলে বাবলু মাতুব্বর ও তার ভাই লাভলু মাতুব্বর খুন করে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছে। জায়গা দখলের বিষয়ে আমি থানায় গেলে আমার মামলা নেয়নি। দখলকারীরা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছের লোক হবার কারণে চেয়ারম্যানও বিষয়টি নিয়ে কোন সুরাহা করছেনা।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বাবলু মাতুব্বর ও লাভলু মাতুব্বর উপস্থিত থেকে ঘর তৈরীর তদারকি করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা লাভলু মাতুব্বর সাংবাদিকদের জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আমার কাছের লোক। তিনিই আমাকে ঘর তৈরির কথা বলেছেন। বাঁশ বিক্রির ১০ হাজার টাকাও রয়েছে চেয়ারম্যানের কাছে। এ গ্রামে আমরা যা বলবো তাই হবে, বাইরে থেকে এসে আপনারা কিছু করতে পারবেন না।
জমি দখলকারী বাবলু মাতুব্বর বলেন, আমি ১৫ বছর আগে জমিটি কিনেছি। আমার জমিতে আমি ঘর তৈরী করছি।
চরযশোরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান পথিক বলেন, লাভলু মাতুব্বর আমার নাম ভাঙ্গিয়ে যা বলেছে তা ঠিক বলেনি। আমি কাউকে ঘর তুলতে বলিনি। তবে ঐ জমির বিক্রি করা বাঁশের টাকা আমার কাছে জমা আছে। বাবলু মাতুব্বর ও মান্নান ফকিরের জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়টি আমার জানা আছে। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য ভাবে মিমাংশা করা যায় কিনা তা দ্রুত দেখা হবে।
বিডি প্রতিদিন/১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/হিমেল