মাদারীপুরে আলোচিত আল-আমিন হত্যার ঘটনায় ২টি মামলা হলেও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের দাবি আদালতে করা মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। অপর এজাহারভুক্ত মামলার আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামিরা পালিয়ে থাকায় তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। অথচ পুলিশের খাতায় এই হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুককে জনবহুল এলাকায় দেখা যায়। জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, তিনি পুলিশকে 'ম্যানেজ' করেই থাকেন প্রকাশ্যে। অন্যদিকে, নিজে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলে দাবি করছেন অভিযুক্ত গোলাম ফারুক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের ভাদুরী গ্রামে আল-আমিন ফকিরকে গত ১২ মার্চ দুর্বৃত্তরা হত্যা করে লাশ ফেলে যায়। এ ঘটনায় নিহতের চাচা মজিবর ফকির বাদী হয়ে গত ১৪ মার্চ কালকিনি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে কালকিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর গোলাম ফারুককে। এছাড়া আরো ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এজাহারে। মামলার করার প্রায় ২০ দিন পার হলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়াও আল আমিনের মা জুলেখা বেগম বাদী হয়ে গত ২২ মার্চ মাদারীপুর আদালতে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গত শনিবার মাদারীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পাভেলুর রহমান শফিক খানের ছেলের সুন্নাতে খাতনা অনুষ্ঠানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কয়েক হাজার আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আল আমিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি মীর গোলাম ফারুকও।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালকিনি থানার এসআই অমল কুমার বলেন, ‘আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কঠোর অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।’
হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতারের ব্যাপারে কালকিনি থানার ওসি কৃপা সিন্দু বালা বলেন, হত্যা মামলাটি তদন্তাধীন। মামলার সব আসামিরা ওয়ারেন্টভুক্ত নয়, তবে এজাহারভুক্ত। তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের নাম আসবে তারাই ওয়ারেন্টভুক্ত। ওয়ারেন্টভুক্ত না হলে চাইলেই আসামিদের গ্রেফতার করা যায় না।
তবে আইনজীবীরা ভিন্ন বিধানের কথা বলছেন। মাদারীপুর বারের আইনজীবী আবুল হাসান হোসেল বলেন, হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে। এমনকি এজাহারভুক্ত না হলেও সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারের সুযোগ রয়েছে। গাজী শামসুর রহমান রচিত বাংলাদেশ পুলিশ হ্যান্ডবুকের ২২৬ পাতায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে ৩০২ ধারা মোতাবেক নরহত্যায় বিনা ওয়ারেন্টে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে। বিষয়টি মীমাংসাযোগ্য নয়। দণ্ডবিধি অনুসারে শাস্তি মৃতুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাবাস ও জরিমানা। মামলাটি পরিচালনা করবেন দায়রা আদালত।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) উত্তম কুমার পাঠক বলেন, মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সম্পূর্ণ স্বাধীন। তদন্তের প্রয়োজনের এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেন। বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন।
এ মামলার ব্যাপারে আসামি মীর গোলাম ফারুক বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। কালকিনি থানার ওসি কৃপা সিন্দু বালা এবং বাহাউদ্দিন নাছিম ষড়যন্ত্র করে আমাকে মামলার আসামি করেছে।
বিডি-প্রতিদিন/০১ এপ্রিল, ২০১৮/মাহবুব