১৩টি গ্রাম ও ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার ৫নং চরপাতা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের গাজীনগর গ্রামে ডাকাতিয়া নদী পারাপারে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। প্রায় ৩২ বছর আগে গ্রামবাসীর নিজ উদ্যোগে ও নিজ খরচে তৈরি হয় এ সাঁকোটি। মাঝেমধ্যে প্রবল বৃষ্টি হলে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যায় সাঁকো। সাঁকোটি নির্মানের আগে গ্রামবাসীরা পার হতেন নৌকায়।
গ্রামবাসীরা জানান, উপজেলার প্রায় ইউনিয়নে কম-বেশি উন্নয়ন কাজ চললেও তাঁদের ইউনিয়নে প্রয়োজনীয় রাস্তা, সেতু ও কালভার্ট নির্মিত হয়নি। এতে গ্রামবাসীর চলাচলের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই সরকার বা জনপ্রতিনিধিদের অপেক্ষায় না থেকে গ্রামবাসীরা তাদের নিজেদের উদ্যোগে ডাকাতিয়া নদী পারাপারে সাঁকোটি তৈরি করেন।
১৩টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার ভোটারসহ বসবাসকারী অর্ধলক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। দীর্ঘদিনেও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ পথচারীরা ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। নদীর দু’পাশের সড়কটি পাকা হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ওই স্থানে একটি সেতু নির্মিত হয়নি।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগে সেতু নির্মাণের কথা বললেও তা ভুলে যান। ৭০ ফুট দীর্ঘ এই সাঁকোটিও যেকোনও সময় ভেঙে পড়ার আশংকায় রয়েছেন গ্রামবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইউনিয়নের শায়েস্তানগর ইসলামি মিশন দাখিল মাদ্রাসা, শায়েস্তানগর বানাতুল মুসলেমিন দাখিল মাদ্রাসা, গাজীনগর চরপাতা দারুসন্নত দাখিল মাদ্রসা, চরপাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাহমুবা স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এই সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পার হয়।
এছাড়াও ১০নং রায়পুর ইউনিয়নের পূর্বলাছ, দেবিপুর, চরপলোয়ান, গাজীনগর, চরপাতা, ফদিরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ও দক্ষিণ আলোনিয়া, বিরামপুর, সন্দেশপুর, সাহেবগঞ্জসহ ১৩টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার গ্রামবাসীর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে। শুধু তাই নয় দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষ এবং ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে এই সাঁকো দিয়ে। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
নদীর তীরবর্তী শায়েস্তানগর ইসলামীয়া মিশন দাখিল মাদ্রসারা সুপার শেখ মো. আবদুল কুদ্দুছ ফারুকী বলেন, ‘ডাকাতিয়া নদীর এ অংশের উপর ব্রিজ নির্মাণ করা হলে গ্রামবাসী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের যাতায়াতসহ কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। ব্রিজ না থাকায় এই ইউনিয়নটি আজ অবহেলিত। বর্ষাকালে সাধারণ মানুষসহ শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। তাই ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমরা ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
৫নং চরপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের ৪৭ বছর পরেও ডাকাতিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ‘ডাকাতিয়া নদীর এ অংশের উপর ব্রিজ নির্মাণ করা হলে গ্রামবাসী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের উপকার হবে।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আক্তার হোসেন ভূঁইয়া জানান, ডাকাতিয়া নদীর ওই অংশে ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রকল্প ফাইল মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। বাজেট আসলেই ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/১২ মে ২০১৮/হিমেল