রাজনগর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনিত হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যা দুর্গত লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে উপজেলা সদরের স্কুল, কলেজে, বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িত এবং উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
সেনাবাহিনী সদস্যরা গত দুই দিনে প্লাবিত এলাকায় আটকে পড়া নারী-পুরুষ ও শিশুদের উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন।
এদিকে, মনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরও এলাকা নতুন করে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। যে কোন সময় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙ্গারহাট এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা ভাঙন ঠেকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকায় এখন পর্যন্ত কোন ত্রান সামগ্রী পৌঁছেনি।
শুনিবার রাজনগর উপজেলার বন্যা কবলিত কামারচাক, টেংরাবাজার ও মনসুরনগর ইউনিয়ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কামারচাক ইউনিয়নের ৪২টি গ্রামের সবকটি তলিয়ে গেছে। মানুষের বাড়িঘরে কোথাও গলা পানি আবার কোথাও ঘরের চাল ছুঁই ছুঁই। এরমধ্যেই অনেকে চুরি-ডাকাতির ভয়ে নিজের বাড়িঘরে অবস্থান করছেন।
কামারচাকের ইসলামপুর গ্রামের সুমাইয়া বেগম ও রাছনা বেগম জানান, তারা গত তিন দিন ধরে পানিবন্দী ছিলেন। আজই তাদের উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
একই গ্রামের সোহেনা বেগম জানান, গত চার দিন ধরে তিনি পানিতে আটকা। শুধু চিড়া খেয়ে জীবনধারণ করছেন। আজ তাক উদ্ধার করে কামারচাকের তারাপাশা বাজার স্কুল আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
মশাজান গ্রামের মফিজ মিয়া জানান, চার দিন পর তাকে আজ স্বজনরা তাকে উদ্ধার করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, কামারচাক ইউনিয়নে শুধুমাত্র তারাপাশা বাজার এখন পর্যন্ত পানিতে ডুবেনি, সেখানে স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গত লোকজন সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া অনেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধেও আশ্রয় নিয়েছেন। রাজনগর উপজেলা সদরে অবস্থিত রাজনগর ডিগ্রি কলেজ ও রাজনগর পোর্টিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়েও আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা কামারচাক এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
এদিকে, উপজেলার কদমহাটা বাজার এলাকায় মনু নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় মনসুরনগর, পাঁচগাঁও ইউনিয়নের বহু গ্রাম তলিয়ে গেছে। রাজনগর-মৌলভীবাজার সড়কের তিন কিলোমিটার এলাকার উপর দিয়ে বুক সমান পানি প্রবাহিত হচ্ছে প্রবল বেগে।
জেলা শহরের সাথে রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় বা মেরামতে গত দুই দিনেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, মনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মৌলভীবাজার শহরে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ছুঁই ছুঁই করছে। যে কোন সময় পানি শহরে ঢুকতে পারে এই আশঙ্কায় শহরবাসী নিজেদের সব জিনিসপত্র গোছাচ্ছেন। আর সেনাবাহিনীর সদস্যরা শহর রক্ষা বাঁধে বালির বস্তা ফেলে প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন।
বিডি প্রতিদিন/১৬ জুন ২০১৮/আরাফাত