হাসপাতালে লাইব্রেরি করে দেশের ইতিহাসে নজির স্থাপন করেছে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। লাইব্রেরিতে রয়েছে স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং নিরাপদ খাদ্যসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক শতাধিক বই। ডিজিটলি এ যুগে হাসপাতালের এই লাইব্রেরি এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। শুধুমাত্র রোগীদের সাথে আসা লোকজনই নয়, অন্যরাও এর পাঠক। তাই পাঠক দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার তার বারান্দার করিডোরে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে লাইব্রেরিটি। এর শুভ উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ন সচিব মো. আনোয়ার হোসেন। লাইব্রেরিটির উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
হাসপাতালে রোগীরা আসেন সেবা নিতে। বিভিন্ন কারণে তাদের অলস সময় কাটে। তাছাড়া রোগী যখন হাসপাতালে নিঃসঙ্গতায় ভুগেন তখন তাদের অবসরকালে বই হতে পারে বিশেষ সঙ্গী। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিষয়ক বইগুলো সাধারণ মানুষকে দিবে স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে জ্ঞান, রোগ সম্পর্কে তথ্য, এর প্রতিকার সম্পর্কের দিবে প্রাথমিক ধারণা। এমন ধারণা নিয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু করা হয়েছে এ লাইব্রেরিটি। লাইব্রেরিটির পরিধি আরো বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের ডা. মাহমুদুন নবী পলাশ।
সেবা নিতে আসা বীরগঞ্জের শীতলাই গ্রামের রহিম বখস উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ লিয়ন ইসলাম বলেন, আমার আম্মা মজিদা বেগম বেশ কয়েকদিন জ্বরে ভুগছেন। এখানে চিকিৎসকের কাছে এসেছি। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা র্কার সময় লাইব্রেরী দেখতে পেয়ে আম্মুকে নিয়ে বই পড়ে সময় পার করলাম। বই পড়ে জানলাম খাবার কিভাবে সংরক্ষণ, জীবানু মুক্ত রাখা যায়। পুষ্টি খাবার কি কি। এখান থেকে অনেক কিছু জানা যায় ।
দামাইক্ষেত্র গ্রামের ব্যবসায়ী মোঃ শাহজাহান সিরাজ বুলবুল বলেন, এখানে লাইব্রেরিতে বিশেষ করে প্লেগ রোগ এবং ডেঙ্গু রোগের উপর লেখা বইটি পড়ে অনেক তথ্য জানতে পারলাম।
দেবীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামান বাবু জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাইব্রেরি স্থাপন নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সেবায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা করি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের লাইব্রেরিটি যেন কোন না কোন ভাবে একজন চিকিৎসকের ভূমিকার রাখেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ১ সেপ্টম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর থেকে পাঠকের বেশ সাড়া পড়েছে। প্রতিদিন রোগী এবং রোগীর সাথে আসার তাদের স্বজন বসে বই পড়ে। আমাদের চিকিৎসক হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই যেন উপকৃত হয় এমন চিন্তা থেকে লাইব্রেরিটি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সমস্যা, শিশুদের নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য, শিশুর স্বাস্থ্য সেবা, বার্ড ফু, বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরী স্বাস্থ্য তথ্যসহ বাংলায় লেখা স্বাস্থ্য সেবা মুলক নানা ধরণের বই রয়েছে যা খুব প্রয়োজনীয়। কেউ চাইলে অনুমতি সাপেক্ষে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়তে পারেন। পাঠকের সংখ্যা বাড়লে লাইব্রেরীর পরিধি বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে। লাইব্রেরী থেকে কেউ যদি উপকৃত হয় তবেই স্বার্থক হবে আমাদের এই ছোট উদ্যোগটি। আমরা নিজেরাই এসব বই কালেকসন করেছি। এবং কেউ বই দিতে চাইলেও গ্রহণ করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার