নরসিংদীতে চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাতে নরসিংদী সদর হাসপাতালে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শিশু সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের স্বপন দাস ও ফাল্গুনি দাসের প্রথম সন্তান।
এদিকে, নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সক্রিয় হয়ে উঠে হাসপাতালের একটি প্রভাবশালী মহল। তাদের ব্যাপক তৎপরতার কারণে ঘটনার একদিন পেরিয়ে গেলেও নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরে গর্ভবতী ফাল্গুনী দাসের প্রসব ব্যাথা উঠলে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে নরমাল ডেলিভারির আশ্বাস দিয়ে রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখে। কিন্তু রাতে যখন ব্যাথা বেড়ে যায় তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নরমাল ডেলিভারির উদ্দেশ্যে তাকে অস্ত্রোপাচারের কক্ষে নিয়ে যায়।
ওই সময় অপারেশন না করে নার্সরা এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে। তাদের বাইরে থেকে ডেকে আনলে পরবর্তীতে তারা অপারেশন শুরু করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে তারা জানায় নবজাতকটি মারা গেছে।
এসময় চিকিৎসক ও নার্সদের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনরা। পরে স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে নার্সরা হাসপাতাল ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে, নবজাতকের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে স্বজনরা। নিহত নবজাতকের চাচা তাপস দাস বলেন, আমরা যখন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসি এর কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকরা তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করায়। তখন সেই রিপোর্ট দেখে তারা আমাদের বলেছিল শিশুটি পুরোপুরি সুস্থ আছে। নরমাল ভাবেই ডেলিভারি সম্ভব। যদি সব কিছু তখন ঠিক থাকে তাহলে কেন আমাদের নবজাতকটি মারা গেল।
তারা যখন এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে তখন অনুরোধ করেছিলাম, একটা সিরিয়াস রোগী রেখে আপনারা এদিক সেদিক যাবেন না।
নিহত নবজাতকের ভাই ফালান দাস সাংবাদিকদের বলেন, তাদের (চিকিৎসক-নার্স) গাফিলতি আর অবহেলার কারণেই আজকে আমাদের নবজাতক শিশুটি মারা গেল। আমাদের শিশুটি মারা যাওয়ার পুরো দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
রাতে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাদিরুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, নরমাল ডেলিভিরি চিকিৎসকরা নয়, নার্সরা করেন। অনেক ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারিতে জটিলতা থেকে যায়। এক হাজার নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে ৩৪ জন শিশু মারা যায়। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। এতে করে যদি কোন শিশু মারা যায় তাহলে চিকিৎসকের কি করার আছে?
তবে রোগীকে ভিতরে রেখে ডাক্তার আর নার্সরা বাইরে ঘোরাঘুরির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
অন্যদিকে, শুক্রবার রাতের ঘটনা শনিবার বিকালেও জানেন না সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আমিরুল ইসলাম শামীম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি আমাকে কেউ অবহিত করেনি। আমি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের নিকট এ বিষয়ে ব্যাখ্য চাইবো।
দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি স্বভাবসুলভ ভাবে বলেন, নবজাতকটি মৃত জন্ম হয়েছে, নাকি জন্মের পর মৃত্যু হয়েছে তা না জানার আগে এই ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না।
সিভিল সার্জন ডা. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে কারও দায়িত্ব অবহেলা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮/আরাফাত