আগামী ১ নভেম্বর। নরসিংদীর জনপ্রিয় পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের সাত বছর। ২০১১ সালের এই দিনে দলীয় কার্যালয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ৭ বছর পর হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মোবারক হোসেন মোবাকে গ্রেফতার করেছে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর ডিওএইচএস এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে মোবার দেওয়া তথ্য মতে তার বাসা থেকে দুইটি বিদেশী পিস্তল ও সাত রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, মোবারক হোসেন মোবা নরসিংদীর প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। তিনি ওই মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের উপ পর্রিদশক রুপম কুমার সরকার ও জাকারিয়া অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। তার সঙ্গে রেহানুল ইসলাম ভূইয়া লেলিন নামের আরেক জনকে আটক করা হয়েছে। তিনিও বিভিন্ন মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। মোবারক হোসেন মোবা মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে দেশ ত্যাগ করেন। এতদিন তিনি মালয়েশিয়াতে পলাতক হিসেবে আত্মগোপন করেছিলেন।
এদিকে বুধবার বিকেলে অস্ত্র আইনের মামলায় নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল ইসলামের আদালতে মোবারকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নরসিংদী নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা গোলাম মোস্তফা বলেন, গত ২৫ অক্টোবর দোবাই থেকে দেশে ফিরেছেন মোবারক। এতদিন তিনি পলাতক অবস্থায় ছিলেন। আমরা সবসময় তাকে নজরধারিতে রাখছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও আমাদের সোর্সের দেওয়া তথ্যর মাধ্যমে রাজধানীর ডিওএইচএসের একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বিপিএম বলেন, আইন অনুযায়ী মোবারক এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও লোকমানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১ নভেম্বর পৌর মেয়র লোকমান হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় নিহতের ভাই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে ১৪ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
এর মধ্যে এক আসামি মোবারক হোসেন মোবা বিদেশে পলাতক ছিলেন। বাকি ১৩ জনের সবাই গ্রেফতার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন। পুলিশ প্রায় আট মাস তদন্ত করে ২০১২ সালের ২৪ জুন এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়। তাতে মামলার এজহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন, এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তাঁর ছোট ভাই শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকারসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী কামরুজ্জামান কামরুল। আদালত ২৫ জুলাই নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযোগপত্র বহাল রাখেন। পরবর্তীতে ২৮ আগস্ট নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আদালত ২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ফের নারাজি আবেদন খারিজ করেন। এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদি। তিনি ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মাধ্যমে আবার তদন্তের দাবি জানিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। আদালত বাদির আবেদনটি আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত করে দেন।
প্রায়াত মেয়র লোকমান হোসেনের ছোট ভাই নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নরসিংদী পৌর মেয়র কামরুজ্জামান বলেন, আমার বড় ভাই লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মোবারক হোসেন মোবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটি নরসিংদীবাসীর জন্য কতটা আনন্দের তা বলে বুঝানো যাবে না। তাও আবার লোকমান ভাইয়ের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীর আগের দিন। এখন লোকমান হত্যার আসল খুনিদের নাম বেরিয়ে আসবে। মোবারককে ভালো করে জিঙ্গাসাবাদ করলে সে সব তথ্য পুলিশকে দিবে। সঠিকভাবে তদন্ত করলে লোকমান হত্যার বিচার দ্রুত শেষ হবে এবং খুনিরা শাস্তি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/৩১ অক্টোবর, ২০১৮/মাহবুব