বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ডিপ্লোমা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ বর্ষের ছাত্র নাঈম ইসলাম (২০) হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। নাঈমের অ্যাপাচি বাইক ছিনিয়ে নিতেই সারিয়াকান্দি পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত শ্রাবন বিশু তাকে বাড়িতে নিয়ে মদ ও ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে। এরপর সে তার এক পলাতক সহযোগীর গরু জবাই করার ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেটে পাঁচবার ছুরিকাঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতেই নাঈমের গলা কাটা হয়। এরপর লাশ ৫০ গজ দূরে নিয়ে কাগজ ও পলিথিন রেখে আগুন দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়।
বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে অনন্ত শ্রাবণ বিশু। বৃহস্পতিবার বিকালে জবানবন্দি দেওয়ার পর বিশু ও তার সঙ্গে গ্রেফতার চার বন্ধুকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বগুড়ার গাবতলী ও সারিয়াকান্দি সার্কেলের সিনিয়র এএসপি তাপস কুমার পাল এ তথ্য জানিয়েছেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খয়ের উদ্দিন জানান, বিশুর ওই সহযোগীকে খোঁজা হচ্ছে। গ্রেফতার অপর চার জনকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার মনিরুজ্জামান মনির ও আতিকুর রহমান নিহত নাঈম ইসলামের স্কুল জীবনের বন্ধু। ওই দুই জনের মাধ্যমে নাঈমের সঙ্গে অনন্ত শ্রাবণ বিশু, সিহাব বাবু, অন্তর ও সাব্বিরের সঙ্গে পরিচয় হয়। বিশু ও তার এক সহযোগী নাঈম ইসলামের এ্যাপাচি বাইকটি ছিনিয়ে নিতেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
গত ১৫ নভেম্বর সারিয়াকান্দির কালিতলা গ্রোয়েন বাঁধ এলাকায় বেড়ানোর নামে বন্ধুরা নাঈমকে ডেকে নেয়। এদের মধ্যে সাব্বিরের সঙ্গে গার্লফ্রেন্ড ছিল। নাঈমকে সারিয়াকান্দি বাজার এলাকায় অন্তত শ্রাবণ বিশুর ভাড়া বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে নাঈমকে পানির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মেশানো পানি পান করানো হয়। এরপর দুই বোতল অ্যালকোহল সংগ্রহ করা হয়। এর এক বোতল নাঈম পান করলে অচেতন হয়ে পড়ে। বেড়ানো ও মদপান শেষে বিশু ও তার সহযোগী অন্য সবাইকে বিদায় করে দেয়। রাতে বিশু ও তার সহযোগী বাড়িতে ফেরে। ওই সহযোগী গরু জবাই করার ছুরি দিয়ে অচেতন নাঈমের পেটে পরপর চারটি আঘাত করে। এরপর বিশু নিজে একটি আঘাত করে। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে বিশু পা ধরে থাকে এবং তার সহযোগী গলাকেটে নাঈমের মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরিচয় গোপন করতে পরে লাশ কাঁথায় মুড়িয়ে বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে একটি মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে লাশের ওপর কাগজ ও পলিথিন ব্যাগ রেখে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে নাঈমের লাশ ঝলসে বিকৃত হয়ে যায়। বিশু তার এক বিশ্বস্ত সহযোগীর কাছে নাঈমের বাইকটি রাখতে দেয়।
এদিকে নাঈম বাড়িতে না ফিরলে তার মা নাজমা বেগম ও অন্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তাদের সঙ্গে বিশু ও অন্যরা অংশ নেয়। নাজমা বেগম সারিয়াকান্দি থানায় ছাত্রলীগ নেতা বিশুসহ উল্লেখিত ছয় জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। এরপর গ্রামের একটি মাঠে ওই বাইক ও নাঈমের রক্তমাখা শার্ট পাওয়া যায়। এছাড়া পুলিশ বিশুর ভাড়া বাড়ির ঘর থেকে রক্তমাখা ছুরি, নাঈমের শিক্ষা আইডি, মানিব্যাগ, জুতা ও রক্তমাখা কম্বল, বালিশ এবং অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করে।
পলাতক সাব্বির বাদে গ্রেফতার পাঁচ জনকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট দুদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে শুধু বিশু আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। পরে পাঁচ জনকেই জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা খয়ের উদ্দিন জানান, হত্যাকাণ্ডে বিশু ও তার সহযোগী অংশ নিয়েছে। এরপরও গ্রেফতার সবাইকে হাজতে পাঠানো হয়েছে। বিশুর ওই সহযোগী এবং সাব্বিরকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। বিশুর সহযোগী ও সাব্বির গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/২৩ নভেম্বর ২০১৮/হিমেল