নোয়াখালীর মাইজদী শহরে প্রেম করার 'অপরাধে' কলেজ পড়ুয়া মেয়ে তাবাছসুম তানিয়া চমককে (২২) শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন মা সাজেদা আক্তার নিপু (৪০)। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাসহ একই পরিবারের ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
আজ শনিবার সকাল ১১টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ এ তথ্য জানান।
নিহত তাবাছসুম তানিয়া চমক নোয়াখালীর সোনাপুর ডিগ্রি কলেজের অনার্স (সম্মান) হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
গ্রেফতাররা হলেন- চমকের মা সাজেদা আক্তার নিপু (৪০), ছোট বোন তাসনিম তাহসিন চাঁদনী(১৯) ও মামা জাহিদুল ইসলাম (৩০)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অনার্সে পড়া অবস্থায় তাপস নামে এক সহপাঠীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে চমক। সময়ের সাথে সাথে তাদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। ঘটনার ৫-৬ দিন আগে ডাক্তার দেখানোর জন্য চমকের বাবা শাহজাদ এনামুল হক হিমেলের সাথে সাজেদা আক্তার নিপু ঢাকায় যান। এসময় মাইজদী পৌর বাজার সংলগ্ন জয়কৃষ্ণপুর বাসায় শুধু চমক এবং তার ছোট বোন চাঁদনী ছিলেন।
পরে গত ১২ নভেম্বর রাত ১০টার দিকে ট্রেনে করে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরেন চমকের মা নিপু। এসময় মায়ের অনুপস্থিতিতে চমক প্রেমিক তাপসের সাথে সারাদিন কথা বলায় ব্যস্ত ছিল বলে মাকে অবগত করে নিহত চমকের ছোটবোন চাঁদনী। এসময় ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে চমককে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে নির্যাতন করে তার মা। এর একপর্যায়ে চমক মেঝেতে পড়ে গেলে ছোটবোন চাঁদনীর শরীর থেকে ওড়না টেনে নিয়ে চমকের গলায় পেঁছিয়ে শ্বাসরোধ করে চমককে হত্যা করে তার মা।
পরে মা নিপু ও তার ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম সোহেলের সহযোগিতায় ওড়না দিয়ে টেনে ঘরের পাশের একটি ডোবার মধ্যে চমকের মরদেহ ফেলে ময়লা আবর্জনার নিচে চাপা দেয়।
এ ঘটনার পরের দিন ১২ নভেম্বর নিহতের মা সাজেদা আক্তার নিপু রেল স্টেশনে স্বামীকে এগিয়ে আনতে গিয়ে চমক নিখোঁজ হয় এ মর্মে থানায় একটি জিডি করেন। ঘটনার ৩ দিন পর ১৫ নভেম্বর বিকেলে তাদের বাসার পাশের ডোবা থেকে চমকের গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে তার প্রেমিক তাপসকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে নিহতের ছোটবোন চাঁদনির আদালতে স্বাীকারউক্তিমূলক জবানবন্দির প্রেক্ষিতে এ ঘটনায় নিহতের মা ও মামাকে আটক করে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ জানান, শুক্রবার তাসনিম তাহসিন চাঁদনীকে নোয়াখালী বিচারিক আদালত-২ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেব উদ্দিন খানের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্দিতে চাঁদনী ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় নিহতের বাবা শাহজাদা এনামুল হক হিমেল বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং-২১)। আসামিদের মধ্যে চাঁদনীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল/এনায়েত করিম