ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস-এ আখ সরবরাহ করেও টাকা না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আখ চাষিরা। প্রায় দু’মাস আগে চিনিকলে আখ সরবরাহ করেছেন তারা। অথচ দু'মাসে সেই আখের মূল্য পাননি আখ চাষিরা। এতে চিনিকলে চাষিদের বকেয়া প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
এদিকে আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ আখ চাষিরা দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধের দাবিসহ নানা অনিয়মের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারলিপি প্রদান করেছে। আখ চাষিসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সুগার মিল এলাকায় স্থানীয় আখ চাষিদের কাছে থেকে আখ ক্রয় করা হয়। ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের ৭টি সাবজোনের মোট ২১ টি কেন্দ্রে প্রায় ৮ হাজার আখ চাষি তাদের আখ বিক্রি করেন।
কেন্দ্রীয় ইক্ষু চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক তোজাম্মেল হক তোজা জানান, ঠাকুরগাঁও চিনিকলে ৫ হাজার চাষি এবং ব্যবসায়ী, কুলি, মজুরসহ ৮০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চিনিকলের সাথে জড়িত। এতে ৩ হাজার পরিবার তাদের পাওনা বকেয়া টাকা না পেয়ে অর্ধাহারে, অনাহারে মানবেতর দিন পার করছেন। এ অবস্থায় ৭ দিনের মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চাষিরা। বক্তারা চিনিকলে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারিদের জিম্মি করে তাদের বেতনের ১৬ শতাংশ কমিশন কেটার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সাথে ৭ দিনের মধ্যে চিনি শিল্পের চেয়ারম্যান এ.কে.এম দেলোয়ার পদত্যাগের দাবি জানান।
চাষিরা মোবাইল ফোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে পূর্জি (আখ সরবরাহের পত্র) পান। এ পূর্জি মোতাবেক চাষিরা আখ সরবরাহ করেন। তাদের আখ বিক্রির অর্থ বর্তমানে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সর্বশেষ আখ বিক্রির টাকা পেলেও আর কোন টাকা পাননি চাষিরা। ফলে টাকার অভাবে অনেক চাষি তাদের চৈতালী আবাদ করতে পারছেন না। সুগার মিলে সরবরাহকারী আখচাষিদের প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
অপর দিকে প্রায় ৬ মাস থেকে বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে ঠাকুরগাঁও চিনি কলের শ্রমিক-কর্মচারীদের। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। এ পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কৃষকদের পাশাপাশি আখ চাষে নেমে পড়েছে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরাই। মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, উৎপাদিত চিনি বিক্রি না হওয়ায় বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাদের দাবি, আখ চাষের জন্য কৃষি উপকরণ ও ঋণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস শাহী জানান, আখ চাষিদের বকেয়া বিলসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য উপর মহলে জানানো হয়েছে। দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য মিল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কামরুজ্জামান সেলিম জানান, তার চিনিকলের অধীনে আখ ক্রয় বাবদ প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। চাষিদের এই বকেয়া অর্থ দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিশোধ জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান করেছেন। শিগগরিই মিল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় বসে আখ চাষিদের বকেয়া বিল পরিশোধের চেষ্টা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল