২০ এপ্রিল, ২০১৯ ১৫:৩০

গলাচিপার অধিকাংশ আশ্রয়ন ও আবাসন প্রকল্প বেহাল

গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:

গলাচিপার অধিকাংশ আশ্রয়ন ও আবাসন প্রকল্প বেহাল

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার অধিকাংশ আশ্রয়ন ও আবাসন প্রকল্পের বেহালদশা। এসব প্রকল্পের ঘরের টিনের চাল শতছিদ্র হয়ে গেছে। বর্ষায় পানি পড়ে মাটির মেঝে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে। টিনের ছিদ্র বড় হয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। এ কারণে ঘরে থকথকে কাদা বাইরে আবার হাঁটু সমান কাঁদা। অনেকটা ঘরের মধ্যেই বন্দি জীবন কাটাতে হয় বাসিন্দাদের। এছাড়া এঙ্গেলে মরিচা ধরে দরজা জানালাও ভেঙে পড়েছে।

দীর্ঘদিনেও এর কোন সংস্কার বা মেরামত না হওয়ায় বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এগুলোতে বসবাস করার সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষা হলেই দিনমান ওদের নির্ঘুম কাটে। তবুও গরীব মানুষেরা অনোন্যপায় হয়ে এতেই বসবাস করছে। সরেজমিন কয়েকটি আবাসন প্রকল্পে গিয়ে এ অব্স্থা দেখা গেছে। এ উপজেলায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের জন্য সরকার আশ্রয়ণ ও শতাধিক আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করেছে। বর্তমানে এ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় প্রকল্প নির্মাণের ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসনের মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে গেছে।

বিছানা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভেজার ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় তাদের। বৃষ্টি হলে বিছানা গুটিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাতভর বসে থাকতে হয়। ভোর হলেই ওদের যেতে হয় দিন মজুরের কাজে। এভাবেই অতিকষ্টে ওরা জীবনযাপন করছে। এমনটাই চিত্র দেখা গেছে, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের ফুলখালী আশ্রায়ন কেন্দ্রে।

১৯৯৭ সাল থেকে সরকার পর্যায়ক্রমে এ উপকূলীয় অঞ্চলে আশ্রায়ন কেন্দ্র নির্মাণ করেন। ২০০১ সালে সরকার ফুলখালী আশ্রায়ন কেন্দ্রের এ ঘরগুলো ভূমিহীন পরিবারদেরকে বরাদ্ধ দেয়। ফুলখালী আশ্রায়ন কেন্দ্রটি সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবুও সেখানে বসবাস করছেন অসহায় হতদরিদ্র ভূমিহীন লোকেরা। অর্থের অভাবে নিজেদের উদ্যোগে ঘরগুলো সংস্কার করতে না পারায় হতাশায় ভুগছেন তারা।

এ কেন্দ্রে ৪০টি পরিবারের দু’শতাধিক লোক বসবাস করছেন। এ ঘরগুলো সংস্কার না হওয়ায় চালের টিন, নাট-স্ক্রু, লোহার উপকরণ ও সিমেন্টের পিলার খসে পড়ে ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বসবাসের অনুপযোগী এসব ঘরে এখন ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে হতদরিদ্র লোকগুলোর। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় ঘরের মেঝেতে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে বছরের পর বছর তারা সেখানে জীবনযাপন করে আসছেন।

আশ্রয়ণের আবু কালাম ব্যাপারী, বশির ফকির, আলামিন  ব্যাপারী, ফিরোজা বেগম, হাসিনারা বেগম ও চানভানু জানান, ঘরের চালের ভাঙা টিন দিয়া বৃষ্টির পানি পড়ে। তখন বিছানা ও জামা কাপড় পানিতে ভিজে যায়। বৃষ্টির কারণে রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারি না। নাট-স্ক্রু ও সিমেন্টের খুঁটি খসে পড়েছে। একটু ঝড় হলেই ঘরগুলো দোলে। তখন ভীষণ ভয় লাগে। এই ভাবে কষ্ট করে আমাদের দিন কাটাতে হয়। একের পর এক বন্যা আমাদের ঘর-বাড়ি তছনছ করে ফেলেছে। সরকার তা ঠিক করে দিচ্ছেন না। টাকার অভাবে আমরাও ঠিক করতে পারছি না।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান হাজী মো. রাকিব মোল্লা জানান, আশ্রয়ন কেন্দ্রের ঘরগুলো সংস্কার না করার কারণে দিন দিন তা আরও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একটু নজর দিলে আশ্রয়নবাসীর এ কষ্ট আর থাকবে না।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানান, সরেজমিন পরিদর্শন করে আবাসন আশ্রয়নের ব্যারাকগুলোর অবস্থা দেখো ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হবে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর