১৭ আগস্ট, ২০১৯ ১৫:২৫

মেহেদির রং মোছার আগেই বাসের চাকায় পিষ্ট নবদম্পতি

নরসিংদী প্রতিনিধি

মেহেদির রং মোছার আগেই বাসের চাকায় পিষ্ট নবদম্পতি

সাদিয়া-ইমরান

ঈদের এক সপ্তাহ আগে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার সাথীর সঙ্গে ইমরানের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ঈদ উৎসব পালন। তারপর হানিমুন। এর সঙ্গে সিলেটে মাজার জিয়ারত। ঈদ আনন্দ হয়েছে। হানিমুন হয়েছে। মাজার জিয়ারতও হয়েছে। তবে বাড়ি ফেরা হয়নি এই দম্পতির। পথেই বাসের চাপায় পৃষ্ট হয়ে চলে গেলেন তারা না ফেরার দেশে। 

মেহেদির রং এখনও মোছেনি। যায়নি বিয়ে বাড়ির ধুম। এরই মধ্যে নবদম্পতিসহ ৪ জনের মৃত্যুর খবরে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে নিহতের পরিবার। স্বজন হারানোর বেদনায় কাতর হয়ে গেছেন নিহতের স্বজনরা। মৃত্যুর খবরে ছুটে গেছেন হাসপাতাল চত্বরে। স্বজনদের হৃদয় বিদারক আর্তনাদ আর কান্নায় ভারী হয়ে উঠে হাসপাতাল চত্বর।

শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সিলেট থেকে ফেরার পথে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঢাকা সিলেট মহাসড়কের কারারচর এলাকায় একটি যাত্রীবাহী পরিবহন বাস-প্রাইভেটকারের মুখোমুখী সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীসহ ৪ জন নিহত হয়।  আহত হয় আরও ৪ জন। মুমূর্ষ অবস্থায় আহত ৪ জনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।  

নিহতরা হলেন প্রাইভেটকারের যাত্রী ঢাকার মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার সাথী (২৬), তার স্বামী ইমরান হোসেন (৩৫),বান্ধবী জান্নাত রাইসা (২৫) ও বন্ধু আকিবুল হাসান (২৭)। নিহত সাদিয়া আক্তার সাথী বগুড়া জেলার মোশাররফ হোসেনের মেয়ে। এবং তার স্বামী ইকরাম নোয়াখালীর আবু হানিফের ছেলে। তিনি ঢাকায় ডেকোরেটরের ব্যবসা করতেন।

হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, বিয়ের পর মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া হানিমুন করতে সিলেটি গিয়েছিলেন। হানিমুন ও মাজার জিয়ারত শেষে বন্ধুদের সঙ্গে প্রাইভেটকারযোগে সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। প্রাইভেটকারটি শিবপুরের কারারচর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক হতে ঢাকা থেকে আসা সিলেটগামী একটি যাত্রীবাহী পরিবহন বাসের সাথে মুখোমুখী সংঘর্ষ ঘটে। এসময় প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বাসটি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারে থাকা নবদম্পতিসহ ৩ যাত্রী মারা যায়। 

খবর পেয়ে ইটাখোল হাইওয়ে পুলিশ,ফায়ার সার্ভিস নরসিংদী ও শিবপুরের ৪টি ইউনিট দুর্ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে। আহতাবস্থায় বাস ও প্রাইভেটকারের আরও ৫ যাত্রীকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসাধিন অবস্থায়  আরও একজন মারা যায় । আহতদের মধ্যে ৪ জনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনার খবর শুনে সকালে জেলা হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহতের স্বজনরা। নিহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাথী আক্তারের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মাসের ৬ তারিখ সাথী ও ইসমাইলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ঈদের ছুটিতে গত ৪ দিন পূর্বে হানিমুন ও মাজার জিয়ারত করতে বন্ধুদের নিয়ে সিলেট যায়। ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। পুলিশের কাছ থেকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তারা হাসপাতালে এসেছে।

নিহতের মা রহিমা বেগম বলেন, মাত্র ১০ দিন আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। হাতের মেহেদি রং এখনো মুছেনি। এর আগেই দুর্ঘটনা আমার মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে। আমি এখন বাঁচবো কি করে ?

মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ’র শিক্ষার্থী সুজন বলেন, মাত্র কিছুদিন পূর্বে ইমরান হোসেনের সঙ্গে আমাদের সহপাঠী সাদিয়া আক্তার কাশফির বিয়ে হয় । জান্নাত রাইসা ও আকিবুল হাসানকে সাথে নিয়ে বৃহস্পতিবার তারা সিলেট ঈদের ছুটিতে সিলেট গিয়েছিল । আসার পথে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।  

নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা দুর্ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা প্রাইভেটকারে তিনজনকে আটকা অবস্থা দেখতে পাই। তাদের উদ্ধার করলে দেখা যায় তারা ঘটনাস্থলেই মারা গেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রাইভেটকারটি ওভারটেকিং করতে গিয়ে বাসের সাথে লেগে যায় এবং গাড়িটি ঘুরে যায়। তখন বাসটি একদম প্রাইভেটকারের উপর দিয়ে চলে যায় এবং খাদে পড়ে যায়। এতে প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

ইটাখোলা হাইওয়ের উপ-পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, মূলত বেপরোয়া গতিতে পাশ কাটাতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে । দুর্ঘটনায় ৩ শিক্ষার্থীসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়। 

 

বিডি-প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর