১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৫:৪৯
কুটিয়ালদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবি

ছোট হয়ে আসছে বানারীপাড়ার ভাসমান ধান-চাল হাটের পরিধি

রাহাত খান, বরিশাল

ছোট হয়ে আসছে বানারীপাড়ার ভাসমান ধান-চাল হাটের পরিধি

বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে দুই শ’ বছরের পুরনো ভাসমান ধান-চালের হাটের ঐহিত্য হারিয়ে যেতে বসেছে। কুটিয়ালদের (ধান প্রক্রিয়াজাত করে চাল উৎপাদনকারী) নিম্নমানের চাল উৎপাদনের কারণে ক্রেতারা ঐতিহ্যবাহী এই ভাসমান হাট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুটিয়ালরা ধান ভালোভাবে না শুকিয়ে চাল উৎপাদন করায় ক্রেতাদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা এখন কুটিয়ালদের চাল না কিনে অটোরাইস মিলের চালের দিকে ঝুকে পড়েছেন। তাই ভাসমান ধান-চালের হাটের ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুটিয়ালদের আধুনিক প্রক্রিয়ায় চাল উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবি উঠেছে স্থানীয়ভাবে। 

বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর দুই তীরে ধান-চালের দুটি ভাসমান হাটের ঐহিত্য দুই শ’ বছরেরও পুরনো। স্থানীয় কুটিয়ালরা ভাসমান হাট থেকে ধান প্রক্রিয়াজাত করে চাল উৎপাদন করে নৌকায়-ট্রলারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন সন্ধ্যা নদীর দুই তীরের ভাসমান হাটে। পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের ধানও। দেশের বিভিন্ন স্থানের শত শত বেপারীরা নৌকায়-ট্রলারে করে ধান এবং চাল কিনে নেয়। পরে তারা সন্ধ্যা নদীর দান্ডয়াট ভাসান মহল (ভাসমান) ধানের হাটে ওই ধান স্থানীয় আড়তদারের মাধ্যমে সামান্য কমিশনে কুটিয়ালদের কাছে বিক্রি করেন। 

এদিকে বেপারীরা ধান বিক্রির কমিশনের টাকা দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কুটিয়ালরা ভাসমান হাট থেকে ধান কিনে নৌকার মধ্যে পানি দিয়ে ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখেন। পরে তারা ওই নৌকার ভেজা ধান তীরে উঠিয়ে চুলার (তাফাল) ওপর ডোঙ্গায় রেখে সিদ্ধ করে বাড়ির উঠোনে কিংবা চাতালে (মাঠে) শুকিয়ে রাইস মিলে নিয়ে ধান মারাই করে চাল উৎপাদন করেন। সেই চাল তারা বানারীপাড়ার লঞ্চ ঘাট সংলগ্ন সন্ধ্যা নদীর ভাসমান চালের হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকার বেপারীদের কাছে বাজার দর অনুযায়ী (চাল) বিক্রি করেন। 

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৫-৩০ বছর আগেও এখানকার কুটিয়ালদের মারাই করা (মলংগার) বাঁশ ফুল বালাম ও মোটা চাল এবং বোরো (ইরি) চাল কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার বেপারীরা নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চযোগে ভোলা, লালমোহন, খুলনা, বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, পিরোজপুর, বরগুনা, আমতলী, পাথরঘাটা, আশুগঞ্জ, আঙ্গারিয়া, চরমুগুরিয়া, কালকিনি, মাদারীপুর, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, কাঠপট্টি, নারায়নগঞ্জ ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করতো। 

কিন্তু বর্তমানে কুটিয়ালরা ধান কম শুকানোর কারণে তাদের উৎপাদিত চাল বেপারীরা কিনতে চাচ্ছেন না। তারা এখন অটো রাইস মিলে আধুনিক পদ্ধতিতে উৎপদিত চালের দিকে ঝুকে পড়েছে। এ কারণে বানারীপাড়ার ধান-চালের ভাসমান হাটের পরিধি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। 

বানারীপাড়ার উত্তরপার বাজারের চাল আড়তদার মজিবুর রহমান বলেন, এখানকার কুটিয়ালরা কম শুকানো ধান দিয়ে চাল উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করেন। ওই চাল বস্তায় রাখলে অল্প দিনের মধ্যে গরম হয়ে দলা বেধে যায়। এ কারণে ওই চাল বস্তায় বেশি দিন রাখা যায় না। ফলে ক্রেতারা বাধ্য হয়ে অটো রাইস মিলের বেশি শুকানো ধানের চাল কিনছেন। 

মজিবর রহমানের মতে, অনেক চাল ব্যবসায়ী অটো রাইস মিলে বোরো (ইরি) কিংবা মোটা চাল ছাটাই করে বালাম চালের মত চিকন করে মিনিকেট নাম দিয়ে চড়া দামে বাজারজাত করছে। তিনি বলেন, কুটিয়ালাদের চাল অটো রাইস মিলের মতো বেশি  শুকানো হলে বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ভাসমান ধান-চালের হাট ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারতো। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে কুটিয়ালদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাল উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবি জানান তিনি। 

বানারীপাড়ার নলশ্রী গ্রামের প্রবীণ কুটিয়াল মো. রুস্তম আলী বলেন, এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় অটোরাইস মিল হয়েছে। এ কারণে কুটিয়ালদের চাল আগের মতো চলে না। এই দুরাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে চাল উৎপাদনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। 

বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ স্থানীয় কুটিয়ালদের চাল যাতে আগের মতো সারাদেশে বাজারজাত করা যায় সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন।


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর