মামলা গ্রহণে দুই থানার ঠেলাঠেলিতে নিখোঁজের পাঁচ দিনেও সন্ধান মেলেনি বাউল সুভাষ রোজারিওর। পাবনার চাটমোহর থানায় সাধারণ ডায়েরি হলেও সীমানা জটিলতার অজুহাতে পাবনা কিংবা নাটোর জেলার সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা না নিয়ে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ পরিবারের। লালন সাধক সুভাষকে উদ্ধারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়।
নিখোঁজ সুভাষের ভাই লুইস রোজারিও জানান, আমাদের সম্প্রদায়ের প্রাক্তন এই সেমিনারীয়ান সুভাষ রোজারিও জাগতিক ভাবনা ছেড়ে বেছে নিয়েছেন বাউল জীবন। লালনের বাণী ছড়িয়ে দিতে গান করেন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মঞ্চ ও টেলিভিশনে। জনপ্রিয় এই লোক সঙ্গীত শিল্পী ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে নাটোরের জোনাইল গ্রাম থেকে ঢাকা যাবার পথে পাবনার চাটমোহর রেল স্টেশন থেকে নিখোঁজ হন। পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও সুভাষের খোঁজ না পেয়ে আমরা হতাশ। তার নিখোঁজের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে খ্রিস্টান পল্লীগুলোতেও।
নিখোঁজের পর সুভাষের মুঠোফোন ও একাধিক অপরিচিত নাম্বার থেকে বেশ কয়েকবার মুক্তিপণ চাওয়া হয় বলেও জানান পরিবারে লোকজন। গত শনিবার সন্ধ্যায় সুভাষকে পাওয়া গেছে জানিয়ে দিনাজপুর রেলওয়ে পুলিশের এস আই রিপন বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নাম্বার দেন চাটমোহর থানার ওসি শেখ মো. নাসীর উদ্দিন। কথিত এসআই রিপন সুভাষ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে চিকিৎসার জন্য পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকাও নেয়। পরে রিপন বড়ুয়া কিংবা সুভাষ কাউকেই হাসপাতালে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, এই ঘটনার পর থানা সীমানা জটিলতার অজুহাতে মামলাও নিচ্ছে না পাবনা কিংবা নাটোর জেলার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
নিখোঁজের দিনে রাতে জোনাইল থেকে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে বহনকারী চালক সুভাষ জানান, ওই রাতে আমি চাটমোহর স্টেশনের পাশে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে যাই। পরে রাতে এক ব্যক্তি আমাকে ফোন করে বলেন, ওই বাউলকে তুমি কোথাকে নিয়ে এসেছ। সব বলার পর ফোনটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি। তবে ওই লোক সুভাষ বাউল নয় বলেও দাবি সিএনজি চালকের। তারপর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ওই বাউলের।
নিখোঁজের সহপাঠী ও জোনাইল ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মহসীন আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সুভাষ আধ্যাতিক জীবন বেছে নিয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার দিনেও আমাদের সাথে আড্ডা দিয়ে গেছেন। তার কোন শত্রু নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় মিশন স্কুলের শিক্ষক হিউবার্ড রোজারিও, সহপাঠি আলফুজ্জামান, মহসিন আলী, জমির উদ্দিনও একই কথা বলেন। তারা যেকোন মূল্যে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চাটমোহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. নাসীর উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি আমার থানা এলাকায় নয়, তাই মামলাটি বরাইগ্রাম থানায় করার জন্যে তাদের পরামর্শ দিয়েছি। তবে ভুলে চাটমোহর থানায় সাধারণ ডায়েরি নেয়া হয়েছে। তবে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ কুমার দাস বলেন, মামলা হবে সেই থানায়, যে থানা এলাকা ঘটনাস্থল। সেক্ষেত্রে মামলাটি চাটমোহর থানাতেই হওয়ার কথা। আমি এ বিষয়ে আমার পুলিশ সুপার স্যারকে পাবনার স্যারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাবো।
পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব