২০ অক্টোবর, ২০১৯ ১৬:২৬

বগুড়ায় পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়লেও দাম কমছে না

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া :

বগুড়ায় পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়লেও দাম কমছে না

পেঁয়াজের ঝাঁঝ কমছে না। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দিনদিন দাম আরও বাড়ছে। বগুড়ায় পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়লেও দাম না কমায় এ নিয়ে হতাশ ক্রেতারা। ক্রেতাদের অভিযোগ, ফায়দা লুটে নিচ্ছে পেঁয়াজের অসাধু চক্র। 

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলায় গত ২০১১ সালে স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজ চাষ ধরা হয় ২ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ৭১২ মেট্রিক টন। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ মৌসুম পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয় এই দুই বছরে গড়ে ৩০ হাজার মেট্রিক টন করে ফলন পাওয়া যায়। পেঁয়াজ চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিদের মাঝে আগ্রহ বেড়ে গেলে চাষের জমিও কিছু বেড়ে যায়। ২০১৬-১৭ মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ হয় ৩ হাজার ২৫০ হেক্টর। এর বিপরীতে ফলন হয়েছে ৩৪ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ হয় ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর। এর বিপরীতে ফলন হয়েছে ৩৪ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ হয় ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর। এর বিপরীতে ফলন হয়েছে ৩৯ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন। চলতি বছর প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর। এর বিপরীতে ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়ছে ৩২ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। 

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ফলনের সময় মাঠ পর্যায়ে গেলে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়বে। মৌসুম শেষে ফলন দাঁড়াবে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি অফিস আরো বলছে, বন্যা ও খরা বাদ দিয়ে গত কয়েক বছরে বগুড়ায় পেঁয়াজের আবাদ বেড়েছে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে বন্যার পানি বগুড়ার সারিকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় দেরিতে নেমে যাওয়ায় পেঁয়াজের ফলন কিছুটা কমে যায়। পরের বছর আবার ভাল ফলন পায় চাষিরা। চলতি বছর অক্টোবর থেকে চাষবাস শুরু হয়েছে। চাষিরা বলছে এবছরও ভাল ফলন পাবে। 

বগুড়া শহরের লাহিড়ীপাড়ার যোগায়পুর গ্রামের বাবলু মিয়া ও শহিদুল মিয়া জনান, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। চাষবাস শেষে হাটে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির পর ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। 

বগুড়া শহরে রাজা বাজার এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান, দেশিয় পেঁয়াজের পাশাপাশি ভারতীয় কিছু পেঁয়াজ পাওয়া যায়। বিক্রির সময় ক্রেতারা দেশীয় পেঁয়াজই নিয়ে থাকে। বর্তমান বাজারে ছোট সাইজের দেশিয় পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৮৫ আর খোলা বাজারে ৯০ টাকা কেজি। মায়ানমার পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৮০ থেকে ৮৫ আর খোলা বাজারে ৯০ টাকা কেজি। ভারতের পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি আর খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি।

বগুড়া সদরের শেখেরকোলা ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাগ গ্রামের মকবুল হোসেন (৫৫) জানান, ১৪ শতাংশ জমিতে ৩ মণ ৫ কেজি পেঁয়াজ রোপন করেছে। রোপন, সার, খৈল, চাষ বাদে খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকার মত। এখন একটু নিড়ানি দিয়ে সময় হলে হাটে তুলবে পেঁয়াজ। মকবুল হোসেনের মত লাহিড়ীপাড়ার কাজী নুরুইল গ্রামের আব্দুল গণি, দেলোয়ার হোসেনও পেঁয়াজের আবাদ করে ভাল ফলনের আশা করছেন। 

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বগুড়ায় পেঁয়াজ চাষে উন্নতজাতের বীজ ব্যবহার করায় চাষিরা সাফল্য পেয়েছে। চাষিদের সাথে কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকায় পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষিরা বেশি আগ্রহী উঠে। এখন মসলা চাষ হিসেবে জেলায় পেঁয়াজের চাষ ও উৎপাদন দুটোয় বেড়েছে। 

বগুড়া শহরের রাজাবাজার আড়ৎদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট আমদানিকারক শ্রী পরিমল কুমার প্রসাদ রাজ বলেন, দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর