বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ মামলার ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন।
নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির তেজদীপ্ত আত্মত্যাগ ইতোমধ্যে তাকে অমরত্ব দিয়েছে বলে এদিন রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন আদালত।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা ফেনী জেলার অন্যতম বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ। এখানে দুই হাজারেরও অধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত। এলাকার শিক্ষা সম্প্রসারণে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আলোকোজ্জ্বল ভূমিকায় কালিমা লিপ্তকারী এ ঘটনা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির তেজদীপ্ত আত্মত্যাগ ইতোমধ্যে তাকে অমরত্ব দিয়েছে। তার এই অমরত্ব চিরকালের অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি আসামিদের ঔদ্ধত্য কালান্তরে মানবতাকে লজ্জ্বিত করবে। বিধায় দৃষ্টান্তমূলক কঠোরতম শাস্তিই আসামিদের প্রাপ্য।
মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামি হলেন মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রুহুল আমিন, প্রভাষক আফছার উদ্দিন, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, হাফেজ আবদুল কাদের, ছাত্র নুর উদ্দিন, ইফতেখার উদ্দিন রানা, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, মো. শামীম, সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, আবদুর রহিম শরীফ, মহিউদ্দিন শাকিল, ইমরান হোসেন মামুন, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন্নাহার মনি, শাহাদাত হোসেন শামীম।
জানা যায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানি করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। একই দিন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় অভিযোগ দাখিল করলে পুলিশ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে। পরবর্তীতে ৬ এপ্রিল নুসরাতের আলেম পরীক্ষা চলাকালীন কৌশলে নুসরাতকে মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় তার সহপাঠী উম্মে সুলতানা পপি। ওখানে অপেক্ষায় ছিল বোরকা পরা আরও চারজন। তারা নুসরাতকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। নুসরাত রাজি না হওয়ায় তারা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। আগুনে তার শরীরের ৯৫ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় নুসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়। নুসরাতের মৃত্যুর পর তার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ফেনীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব