ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক ‘তেলিখালী যুদ্ধ দিবস’ পালিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে রবিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, তেলিখালী যুদ্ধে বীর শহীদদের সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও কাঙ্গালি ভোজসহ অন্যান্য আনুষ্ঠনিকতার মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
আচকিপাড়া শহীদ স্মৃতি আদিবাসী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান (এনডিসি)বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) বীর মুক্তিযোদ্ধা কবিরুল ইসলাম বেগ।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন পজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুর রশিদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম, ভাইস চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন ফকির, মিসেস ঝর্ণা ঘোষ, ময়মনসিংহ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর (পিপিএম), স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্জ এম সুরুজ মিয়া, শহীদ পরিবারের সদস্য, আগত বীর মুক্তিযোদ্ধা বৃন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
আলোচনা সভা শেষে ২ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে চেক প্রদান ও সাত অসহায় মুক্তিযোদ্ধাকে এককালীন ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব উল্লেখ করেন বিভাগীয় কমিশনার। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুৎফুন্নাহার।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর ভারতীয় সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাটের তেলিখালী ক্যাম্প পাকিস্তানি সেনাদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করতে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা এক সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পাঁচ ঘণ্টার রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে ১২৪ জন পাকিস্তানি সেনা ও তাদের শতাধিক সহযোগী রাজাকার আলবদরসহ ২৩৪ জনকে নিহত করে মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথবাহিনী। এতে শহীদ হন মিত্রবাহিনীর ২১ জন জওয়ান ও সাতজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তালিকাভুক্ত সাত শহীদ হচ্ছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ির শওকত আলী, ময়মনসিংহের ফুলপুরের হযরত আলী, হালুয়াঘাটের আক্তার হোসেন, ময়মনসিংহ সদরের আলাউদ্দিন, শাহজাহান, শ্রী রঞ্জিত গুপ্ত এবং সিপাহী ওয়াজিউল্লাহ সহ নাম না জানা অনেকেই। এই বীর শহীদদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিফলক। ক্যাম্পের পেছনে শনাক্ত করা হয়েছে সাত শহীদের গণকবর। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আয়ূব আলীর উদ্যোগে স্থাপন করা হয়েছে শ্বেতপাথরে লেখা সম্বলিত শহীদের নামফলক। ময়মনসিংহ সীমান্তে এটি প্রথম বিজয় ছিল। এরপর থেকেই ৩ নভেম্বর ‘ঐতিহাসিক তেলিখালী যুদ্ধ দিবসকে’ সামনে রেখে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক