মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শুধু মুসলিমরা নয়, অন্যান্য জাতি-ধর্মের লোকও গৃহহারা হচ্ছে এবং সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কারণ রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরকান আর্মির মধ্যে প্রতিদিনই সংঘর্ষ সংঘাত চলছে। এমনটি দাবি করেছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসা মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দলের নেতা মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অর্থনৈতিক বিভাগের মহাপরিচালক চ্যান অ্যাই।
বুধবার বিকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে তাদের সরকার আন্তরিক। মিয়ানমারে ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদেরকে প্রথমে এনভিসি কার্ড দেওয়া হবে। পরে তাদের নিজেদের বাড়িঘর ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তবে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের এসব আশ্বাসে মন ভরেনি রোহিঙ্গাদের।
মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিন ঘণ্টা আলোচনার পর রোহিঙ্গারা তাদেরকে নাগরিকত্ব, নিরাপত্তাসহ তাদের দাবি পূরণ না হলে মিয়ানমারে ফিরতে ইচ্ছুক নন বলে জানিয়েছেন তারা।
বুধবার দুপুর ২টার পর থেকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ফোর এক্সটেনশনে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বৈঠক চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তৃতীয়বারের মতো কথা বলতে কক্সবাজারের এসেছেন মিয়ানমার ও আসিয়ানের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল। দুইদিনের সফরে আসা প্রথম দিনেই অর্ধশতাদিক রোহিঙ্গা নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে সংলাপ করেছেন প্রতিনিধিদলটি।
সংলাপে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে বারবার অনুরোধ করার পরও ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কথা বলতে দুইদিনের সফরে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান মিয়ানমার ও আসিয়ানের একটি উচ্চ পর্যায়ের যৌথ প্রতিনিধিদল।
বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক্সটেনশন-৪ ক্যাম্পে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে মিয়ানমার ও আসিয়ান প্রতিনিধিদলের প্রথম দিনের সংলাপ হয়। ওই সংলাপে অংশ নেন ৪১ রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা ও ৬ কমিউনিটি নারী নেত্রী।
সংলাপে অংশ নেয়া রোহিঙ্গা নেতাদের ‘এনভিসি’ কার্ড নিয়ে মিয়ানমারের ফিরে যেতে বারবার অনুরোধ জানায় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি। কিন্তু রোহিঙ্গারা তা প্রত্যাখান করে বলেছেন, রাখাইনে পূর্ণ নাগরিকত্বসহ নানা সুযোগ সুবিধা দিলেই তারা ফিরবে, এর আগে নয়।
এদিকে, রাখাইনে সহিংস পরিস্থিতি সম্পর্কে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে দেওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থার মহাপরিচালক চ্যান অ্যাই বলেছেন, রাখাইনে চলমান সহিংসতা দীর্ঘ দিনের। এটি শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য নয়, পুরো রাখাইনজুড়ে আরকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রতিনিয়ত সহিংতার শিকার হচ্ছেন।
এর আগে, বুধবার সকালে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অর্থনৈতিক বিভাগের পরিচালক চ্যান অ্যাই’র নেতৃত্বে ৯ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, শ্রম ও অভিবাসন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান। তাদের সঙ্গে ৭ সদস্যের আসিয়ান প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ জুলাই মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে’র নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করেন।
সে সময় আসিয়ানের প্রতিনিধি দলটিও সঙ্গে ছিল। তখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গারা যৌথ সংলাপে অংশ নেয়।
এছাড়াও, ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী উইন মিয়াট আয়ে’র নেতৃত্বে আরও একটি প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসেছিল।
বিডি প্রতিদিন/কালাম