ফেসবুকের কল্যাণে দীর্ঘ ১০ বছর পর হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন বাবা-মা। এক সমাজকর্মীর ফেসবুক লাইভে ছেলেকে দেখে রবিবার দুপুরে বাবা শহীদ মিয়া ও মা সুফিয়া খাতুন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের পুরান গাঁওয়ের কাবুল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। ছেলে শফিককে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার ধুলিহর গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে শফিক সাত বছর বয়সে হারিয়ে যায়। তখন ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে ঘুমিয়ে পড়ে শফিক। বাড়ি কোথায়, বাবা-মা এমনকি জেলা ও উপজেলার নামও জানা ছিল না তার।
অসহায় ছিন্নমূল পথশিশুদের মতোই ঢাকার ফুটপাতে ঠাঁই হয় তার। রাস্তায় বসে কাঁদতে দেখে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের কাবুল মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী পথ থেকে তুলে নেন তাকে। নিজ সন্তানের মতোই প্রতিপালন করে বড় করেন তিনি। কাবুল মিয়ার পরিবারের অন্য ৮ মেয়ে ও দুই ছেলের সঙ্গেই বেড়ে ওঠে শফিক।
সম্প্রতি এ ঘটনা শুনে শ্রীমঙ্গলের শেখ জসিম নামের এক সমাজকর্মী শফিকের মা-বাবাকে খোঁজে পেতে উদ্যোগ নেন। শফিককে সঙ্গে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে শেখ জসিম এ কাহিনী বর্ণনা করেন। সাথে সাথে ভাইরাল হয়ে যায়। ফেসবুক লাইভের সূত্র ধরে ধুলিহর গ্রামের কিছু লোক জসিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা শফিককে চিনেন বলে জানান। বাবা-মা শফিককে ভিডিওতে দেখেই তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান বলেই শনাক্ত করেন।
কাবুল মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, “যখন আমি ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করি, আমার সঙ্গে বাড়িতে যাবে কি না, সে মাথা নেড়ে সায় দেয়।” কাবুল মিয়ার পরিবারে আট মেয়ে দুই ছেলে রয়েছে। তাদের সঙ্গে খেয়ে-পরে বড় হয়েছে শফিক। দশ বছর পেরিয়ে সে এখন ১৭ বছরের তরুণ।
বাবা শহীদ মিয়া এবং মা সুফিয়া খাতুন গত রবিবার সেখানে গিয়ে প্রিয় সন্তানকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শফিকের পালক পিতা কাবুল মিয়া তাদেরকে বলেন, আমিও চাই শফিক তার মা-বাবার কাছে ফিরে যাক। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, সেই ছোটবেলায় তাকে রাস্তায় পেয়েছিলাম। বাড়িতে এনে নিজের সন্তানের মতো বড় করেছি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, শফিক চলে যাবে ভাবলেই প্রচণ্ড কষ্ট হয়। তাকে হয়ত আমি জন্ম দেইনি কিন্তু বাবা-মায়ের অভাব তাকে বুঝতে দেইনি। শফিক জানায়, তার বর্তমান বাবা মা তাকে নিজ সন্তানের মতোই আদর মমতা দিয়ে বড় করে তুলেছেন।
ফেসবুকে লাইভ করা শেখ জসিম বলেন, এর আগেও আমি এভাবে এক মহিলাকে তার স্বামীর খোঁজ দেন। সেই প্রেরণা থেকেই আমার বিশ্বাস ছিল শফিক তার বাবা-মাকে হয়ত ফিরে পেতে পারে। এই বিশ্বাস থেকেই তাকে নিয়ে ফেসবুকে লাইভে আসি এবং সফল হই।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হোসেনপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন কবীর বলেন, ছেলেকে ফিরে পেতে শহীদ মিয়া অনেক টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু ফেসবুকের কল্যাণে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার বিষয়টি সত্যিই অভাবনীয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল