করোনা মহামারীর মধ্যে বন্যার শঙ্কায় নতুন আতঙ্কে ভুগছে সিরাজগঞ্জের যমুনাপাড়ের মানুষ। যমুনার পানির গত এক সপ্তাহ যাবত দ্রুত বৃদ্ধির কারণে একদিকে যেমন ফসল-শাকসজবি তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে অন্যদিকে নদীতীরে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। করোনা দুর্যোগের মধ্যে বনা-ভাঙ্গন যেন নদীতীরবর্তী মানুষের মরার উপর খড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে যমুনা তীরের অসহায় মানুষগুলোর। ভয়াবহ কষ্ট থাকলেও কেউ সহায়তার হাত নিয়ে এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে নদীভাঙ্গন কবলিত মানুষের মধ্যে।
জানা যায়, প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে যমুনা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১১৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিন যেহারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এক সপ্তাহের মধ্যে বিপদসীমা ক্রস করবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে। আর পানি বৃদ্ধির ফলে নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। শাকসবজি, পাট ও কাউনসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন ফসল তলিয়ে নষ্ট হয়ে পড়েছে। এতে কৃষকের চরম ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে, পানি বাড়ার সাথে সাথে এনায়েতপুরের আড়কান্দি থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল পর্যন্ত নদীতীরে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। চৌহালীর বিস্তৃর্ণ এলাকাতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। ভাঙ্গনে বসতভিটা ও ফসলি জমি, হাট-বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাপ-দাদার পৈত্রিক ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ। এছাড়াও শাহজাদপুরে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্থায়ী বাঁধের অন্তত দশটি পয়েন্টে ধ্বসে গেছে। বন্যায় ধ্বসে যাওয়া স্থান মেরামতসহ ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বিস্তৃর্ণ এলাকায় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
এনায়েতপুর আড়কান্দি গ্রামের শাহজাহান ও আছিয়া বেগমসহ কয়েকটি গ্রামের ভাঙ্গনকবলিতরা জানান, একদিকে করোনার কারণে কর্ম নেই অন্যদিকে প্রতিদিন নদীতে জমিজমা বসতভিটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যেন মরার উপর খড়ার ঘা দেখা দিয়েছে। বাপ দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে সবাই খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছি। ঘরতোলার জায়গা টুকু নেই। আমরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ছি। কিন্তু কেউ আমাদের দিকে তাকায় না। এতো কষ্টে থাকলেও কোনো জনপ্রতিনিধিরা খোজ নেয় না। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা যেন বাংলাদেশের বাসিন্দা না।
কৃষক নাজিম উদ্দিন ও আহের আলী জানান, বন্যা শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে আমাদের চরাঞ্চলের তিল, শাকসবজি, পাট ও কাউনসহ ফসল তলিয়ে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। করোনা দুর্যোগের মধ্যে ফসল নষ্ট হওয়ায় আমরা চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি।
কাওয়াকোলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন ঠান্ডু জানান, জুন মাসের শুরু থেকে যমুনার পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সব ধরনের ফসল তলিয়ে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। যেহারে পানি বাড়ছে তাতে এক সপ্তাহের মধ্যে বসতবাড়ীতে পানি উঠতে শুরু করবে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাবিবুল হক জানান, চরাঞ্চলের ৯০ একর জমির পাট ও ৫০ একর জমির তিল সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও টানা বৃষ্টির কারণে ৫৮০ একর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকলে বাদাম ও ভুট্টার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে যমুনার পানি যেহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে গত ৩২ বছরের মধ্যে এতো দ্রুত যমুনার পানি বৃদ্ধি পাই নাই।
তিনি জানান, জুন মাসের শেষের দিকে অথবা জুলায়ের প্রথম সপ্তাহে সিরাজগঞ্জে দিয়ে বড় ধরনের বন্যা হতে পারে। বন্যায় যেন বাঁধের কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য বালিভর্তি জিওব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আর ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় আপতকালীন কিছু কাজ করা হচ্ছে যাতে ভাঙ্গন কিছুটা কম হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন