বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাব ও ভারি বর্ষণে তলিয়ে গেছে সুন্দরবনের অন্যতম উচু পর্যটন স্থান চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। ফলে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্যপ্রাণীর আবাসস্থালসহ দেশের একমাত্র হরিন, কুমির ও বাটারগুল বাচকা কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রটিতে থাকা বন্যপ্রাণীর সংকটাপূর্ণ অবস্থা তৈরী হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পানি এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যা থেকে রক্ষা পায়নি কুমিরের ডিম তা দেয়ার জন্য উচু মাটির একাধিক কেল্লা। কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার আগেই অনাকাংখিত ভাবে সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে করমজল প্রজনন কেন্দ্রর বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল। ফলে কুমিরের ডিম ছাড়া প্রাকৃতিক ভাবে মাটির কেল্লায় থাকা ডিম ফোটার বিষয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল প্রজনন কেন্দ্রর ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা মো. আজাদ কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সুন্দরবনের তুলনামূলক উচু স্থান হিসেবে পরিচিত করমজল পর্যটন কেন্দ্রও ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। লবন ও বালুযুক্ত কাদা মাটির পানিতে করমজলের কুমির প্রজনন কেন্দ্রর ট্যাংকগুলি ডুবে গেছে। তবে বেষ্টনি থাকায় এখানকার কুমির, কুমির ও বাটারগুল বাচকা কচ্ছপগুলোকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়ে মাটির কেল্লায় থাকা এপ্রিল ও মে মাসে পাড়া কুমিরের ডিম ও আবসস্থল ডুবে গেছে।
তিনি বলেন, কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে তিন মাসের কিছুটা সময় ৮৫ থেকে ৯০ দিন লাগে। সে হিসেবে আর অল্প কিছু দিনের মধ্যে কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা বের হবার কথা। গত দুদিনের অত্যাধিক পানির কারণে কুমিরের উচু মাটির কেল্লা ডুবে থাকায় এবার ডিম থেকে বাচ্চা বের হবে কিনা তা নিয়ে তিনি সংকিত।
ওই কর্মকর্তার দাবি সুন্দরবনের অভ্যন্তরে কয়েক শত মিটার পর পর কিছু পুকুর খনন করে জলাধার তৈরীসহ ওই পরিকল্পিত ভাবে মাটি দিয়েই উচু উচু মাটির কেল্লা তৈরা করা গেলে অনাকাংখিত এধরনের সমস্যা থেকে দেশের একমাত্র হরিন ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রর বন্যপ্রাণীকে সুরক্ষিত রাখা যেত।
বর্তমানে সুন্দরবনের করমজল প্রজনন কেন্দ্র ৩৬ টি হরিণ, ৩০০টি বাটারগুল বাচকা কচ্ছপ ও ১৯৩ টি লবন পানি প্রজাতির কুমির রয়েছে। এছাড়া গত ২৯ মে মা কুমির জুটিয়েটের পাড়া ৫২টি ডিমের মধ্যে ১৪টি ডিম মাটির কেল্লায় প্রাকৃতিক উপায়ে বাচ্চা ফোটানোর জন্য রাখা ছিল। এ ছাড়া ৩৮টি ডিম কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটরে রাখা হয়। জুলিয়েটের ডিম দেবার ১৩ দিন পর মা কুমির পিলপিল ১২ জুন ৪৪টি ডিম দেয়। যার মধ্যে ২১টি ডিম মাটিতে প্রাকৃতিক উপায়ে বাচ্চা ফোটানোর জন্য এবং ২৩টি ডিম কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটরে সুরক্ষিত রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল