ব্যক্তি উদ্যোগে উন্নত প্রযুক্তিতে ধান বীজ উৎপাদন, প্যাকেট ও বাজারজাত করে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন কৃষক মো. তামজিদ খান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তিনি বোরো-আমন বীজ উৎপাদন করে চমক সৃষ্টি করেছেন।
চলতি মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে ২৫ টন বীজ উৎপাদন ও বাজারজাত করেন এই আদর্শ কৃষক। বোরো-আমন বীজ উৎপাদন ও প্যাকেটজাত করে বছরে তার আয় হয় ৬ লাখ টাকার ওপর।
তামজিদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামের জাবেদ খানের ছেলে। ইতিমধ্যে তার উৎপাদিত বীজ ছড়িয়ে পড়েছে আখাউড়া, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায়। কৃষক পর্যায়ে ধান উৎপাদনে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখছনে।
তামজিদ খান বলেন, এসএসসি পযর্ন্ত পড়াশুনা করলেও ছোট কাল থেকেই কৃষির প্রতি ছিল যথেষ্ঠ আগ্রহ। প্রথমে তিনি ধান চাষের মাধ্যমে কৃষি কাজ শুরু করেন। ভালো বীজ না থাকা ফলন কম হওয়া ও অন্যদিকে ধানের মূল্য কম থাকায় প্রতি বছর তার লোকসান হতো। এরপরও তিনি কৃষিতে হাল ছাড়েননি।
স্থানীয় পর্যায়ে ভালো বীজরে সংকট দেখে তার মাথায় প্রশ্ন জাগে সরকার ও বিভিন্ন কোম্পানি যে বীজ বিক্রি করেন কীভাবে হয়, কোথা থেকে আসে। এসব বিষয় জানতে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ঢাকায় ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে যান। সেখান থেকে জানতে পারনে কীভাবে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা যায়, কীভাবে বীজ উৎপাদনের লাইসন্সে পাওয়া যায়।
এরপর নিজের অভিজ্ঞতা ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০১৫ সালে শুরু করেন বীজ উৎপাদন ও বিপণন। প্রথম বছর ১০ বিঘা জমিতে চাষ করে ভালো সাড়া পান তিনি। পর্যায়ক্রমে জমি ইজারা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে উন্নত বীজ উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেন।
বীজ উৎপাদনের পর তা বেচাকেনা করতে দোকান রাখা হয়। স্থানীয় কৃষকরা তার বীজ ব্যবহার করে ভালো ফলন পেতে শুরু করে। তার বীজে ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন চাহিদাও বেড়ে যায়। ‘শখ এগ্রো কেয়ার কোম্পানির নামে তার এই প্যাকেটজাত বীজের সুনাম এখন ছড়িয়ে পড়েছে নিজ জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়।
শুধু ধানের বীজ উৎপাদনই নয়, ধানের ফলন ভালো করতে নানা সময়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সাধারণ কৃষকের বন্ধু হয়ে উঠছেন তিনি। নিজের তৈরি করা উৎপাদিত বীজ গত কয়েক বছরে কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি মৌসুমে ব্রি-২৮, ২৯, ৫৮, ৬৭, ৮৭ ও ৪৯ উন্নত জাতের ২৫ টন ও আমনে ১৫ টন মানঘোষিত বীজ বিপণন করা হয় বলে জানায়।
তার উৎপাদিত বীজ কৃষকদের কাছে আড়াই কেজি প্যাকেট ১৫০ টাকা, ৫ কেজি ৩০০ টাকা ও ১০ কেজি ৫৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। বোরো-আমনে বীজ বিক্রিতে সব মিলিয়ে খরচ বাদে তার বছরে আয় হয় ৬ লাখ টাকার ওপর।
পাশাপাশি তার রয়েছে ধান কাটার দুটি হারভেস্টার মেশিন, দুটি হাল চাষের মেশিন। নিজস্ব জমিসহ বার্ষিক ইজারা নিয়ে প্রায় ৬৫ বিঘা জমিতে বর্তমানে চাষ করছেন। হারভেস্টার ও হাল চাষের মেশিন থেকে আয় হচ্ছে দেড় লাখ টাকার উপর। এসব কাজে সাতজন শ্রমিক কাজ করছেন।
উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের মো. আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতি বছর ধান চাষ করে ভালো ফলন না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হতো। লোকমুখে শুনে তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে ধান চাষ করায় প্রতি বিঘায় ১৭-১৮ মন ধান পাওয়া যায়। এরপর থেকে তার করা বীজ দিয়ে ধান চাষ করা হয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো ফলন ভালো রাখতে তিনি সব সময় স্থানীয় কৃষকদের পরমর্শ দিচ্ছেন।
মো. ফরিদ মিয়া বলেন, নিজের করা জমি থেকে ধান দিয়ে বীজ করা হতো। কোনো সময় স্থানীয় বাজার থেকে বীজ আনা হতো। ফলন তেমন ভালো হতো না। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তার বীজ দিয়ে ধান আবাদ করায় ফলন ভালো হচ্ছে।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাজেরা বেগম বলেন, তামজিদ খান একজন সফল কৃষকের পাশাপাশি সফল ব্যবসায়ীও। ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষক পর্যায়ে উন্নত মানের বীজ উৎপাদনে এলাকায় চকম সৃষ্টি করেছেন। কৃষক থেকে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার এ নজির সত্যিই অনন্য।
বিডি প্রতিদিন/এমআই