বাল্যবিবাহ রোধে ডিজিটাল উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যশোরের মণিরামপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ জাকির হোসেন। এ উদ্যোগের আওতায় তৈরি করা হচ্ছে চাইল্ড ম্যারেজ প্রিভেনশন অ্যাপ, যাকে সংক্ষেপে সিএমপি অ্যাপ বলা হচ্ছে।
এই অ্যাপে ইতিমধ্যেই মণিরামপুর উপজেলার ১২০টি মাধ্যমিক ও ৭০টি মাদ্রাসার ১৭ হাজার ছাত্রীর প্রোফাইল সংযুক্ত করা হয়েছে। পুরো কার্যক্রমটি পরিচালিত হবে একটি হটলাইন নম্বরের (১০৯) মাধ্যমে। বাল্যবিয়ের কোন ঘটনা কেউ জানতে পারলে এই হটলাইন নম্বরে কল করে অথবা এসএমএস করে জানাতে পারবেন। সাথে সাথে এই বার্তা একযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), মণিরামপুর থানার ওসি, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনে এই বার্তা চলে যাবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্রুত গতিতে বার্তাপ্রেরকের তথ্য ও অ্যাপে থাকা ১৭ হাজার ছাত্রীর প্রোফাইল মিলিয়ে যদি অভিযোগের সত্যতা পান, সাথে সাথে অভিযান পরিচালনা করবেন। বিশেষ এই অ্যাপটির নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যয়ে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই এর কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে উপজেলা প্রশাসন আশা করছে।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, করোনাকালীন স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগে মণিরামপুরে শতাধিক বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত নিউজ দেখার পর থেকেই তিনি আধুনিক উপায়ে কীভাবে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা যায়, তা নিয়ে ভাবছিলেন। এ ব্যাপারে আইসিটিতে পারদর্শী কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠকও করেন। এসব বৈঠক থেকেই সিএমপি অ্যাপ তৈরির ধারণাটি উঠে আসে।
ইউএনও বলেন, বিষয়টি যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানকে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তাকে তাকিদ দিয়েছেন।
ইউএনও বলেন, মাত্র দুই মাস আগে অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, প্রেগ্রামার, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, থানার ওসি, মাধ্যমিক পর্যায়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে। উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ১৭ হাজার ছাত্রীর ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সিএমপি অ্যাপে প্রত্যেক ছাত্রীর জন্য আলাদা আলাদা প্রোফাইল থাকছে।
মণিরামপুরের নাগোরঘোপ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ বলেন, সিএমপি অ্যাপটি বাল্যবিয়ে রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এজন্য প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
পাড়িয়ালী বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবদুল হালিম বলেন, এই অ্যাপটি থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পুরো এলাকায় ব্যাপক প্রচারণার উদ্যোগ নিতে হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, অ্যাপটি চালু হলে বাল্যবিয়ে রোধ করা অনেক সহজ হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার