চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাটে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশশিল্প। এক সময় গ্রামের গৃহস্থালী কাজে বাঁশের তৈরি আসবাবপত্রের ব্যাপক ব্যবহার ছিল। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক সমাজে বাঁশের সামগ্রীর ব্যবহার একেবারেই কমে গেছে এবং এর জায়গা দখল করে নিচ্ছে প্লাষ্টিক সামগ্রী।
ফলে বাঁশ দিয়ে বানা, চাটাই, ডালি, ঝুড়ি, কুলা তৈরির কারিগররা জীবিকা নির্বাহের জন্য বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে এখন নতুন পেশায় ঝুঁকছেন। তারপরও এখনও যারা পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া আদি এই পেশা ধরে রেখেছেন তাদের জীবন চলছে কোন রকমে। জানা গেছে, জেলার ভোলাহাট উপজেলার উপর ময়ামারী গ্রামে এক সময় অর্ধশত পরিবার বাঁশের তৈরী চাটাইসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরীর সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু এখন কালের আবর্তে হাতে গোনা কয়েকজন এই পেশাটি ধরে রেখেছেন।
উপর ময়ামারী গ্রামের বাঁশ শিল্প কারখানার মালিক মোঃ আব্দুল্লাহ (মিন্টু) জানান, আমার দুটি কারখানা রয়েছে। একটি বাড়ির পাশে। এখানে বানা তৈরী করা হয়। অপরটি হলদাগাছীতে সেখানে চাটাই তৈরী করা হয়। দু’জায়গা মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত লোক কাজ করতেন এবং এখান থেকে প্রায় দু’শত মানুষের রুজি রোজগার হতো। কিন্তু এখন ভোলাহাটে দিন দিন বাঁশ উজাড় হয়ে যাওয়ায় বাঁশ পাওয়া যায়না। ফলে প্রায় ৪’শ কিলোমিটার দূর দিনাজপুর থেকে বাঁশ ক্রয় করতে গিয়ে অনেক দাম পড়ে যায়।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমার দু’টি কারখানায় মাত্র ১২ জন কারিগর কাজ করেন। এদিকে এ শিল্পটাকে ধরে রাখতে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে তিনি ১৩/১৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এখন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার যদি বাঁশ চাষে উৎসাহীত করেন এবং সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দেন তবে বাঁশ শিল্পটি ধরে রাখা সম্ভব হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে এ শিল্পটি ধংস হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে পোল্লাডাঙ্গা গ্রামের ৬০ বছর বয়সী চাটাই তৈরীর কারিগর মোঃ গরিবুল জানান, আগে এই শিল্পের বেশ কদর ছিল। এখন কেউ আর গৃহস্থালী কাজে বাঁশের তৈরী জিনিসপত্র ব্যবহার করে না। এজন্য এই গ্রামে আনেক বাঁশ শিল্পিরা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে বিভিন্ন কাজে চলে গেলেও এখনো তিনি আকড়ে ধরে আছেন বাব-দাদার এই আদি পেশাটি। তিনি বলেন, রেশম পোকার জন্য, খাট-পালঙ্গের জন্য এবং ঘরের তালাই (কোঠা) করার জন্য চাটাই ব্যবহার করতেন। এখন আর সেটা হয় না। তিনি বলেন, এখন বাঁশের মূল্য অনেক বেশি হলেও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের মূল্য নাই। তাই এই পেশায় থেকে জীবিকা নির্বাহ করা কষ্ট হয়ে পড়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার