পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউপিতে নির্বাচনী সংঘর্ষে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম (৪০) নিহত হয়েছেন। শনিবার সকালে ইউনিয়নের কোলাদী চারা বটতলা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র আনারস ও ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান সমর্থকদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের হামলায় তিনি নিহত হন। প্রার্থী নিহত হওয়ায় ভাঁড়ারা ইউপিতে আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকালে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী (ঘোড়া মার্কা) সুলতান মাহমুদের সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের লোকজন বাধা দিলে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। তখন সুলতান মাহমুদের চাচাতো ভাই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপার্থী ইয়াসিন আলমকে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। তখন দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন গুরুতর আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে রাজশাহী মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। রাজশাহী নেওয়ার পথে নাটোরের বনপাড়ায় মারা যান ইয়াসিন আলম।
আহতরা হলেন ভাড়ারা গ্রামের রিয়াদ হোসেন (২২), তুহিন আহমেদ (২৩), আব্দুর রহিম (৩৩), হোসেন আলী (৫০), রুবেল হোসেন (৩০), নলদহ গ্রামের আল্লেক শেখ (৪০), জসিম উদ্দিন (৩৫), আবু তালেব (৩২), তুহিন হোসেন (২৭) আব্দুল্লাহ (৩৫), লালু শেখ (৩৩) মোস্তফা (৪০) ও আল আমিন (২৮)। বাকিদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার পরে আমার হয়ে নির্বাচনী কাজ করা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি সিফাত বিশ্বাস, আওরঙ্গবাদ গ্রামে হেলাল, কোরবানের বাড়িতে গিয়ে সাঈদ চেয়ারম্যানসহ ১০-১৫ জন মিলে গুলি চালিয়ে ভাঙচর করেছে। তখন আমার হয়ে ভোটে কাজ করলে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় তারা। শনিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘরে আমার সমর্থকেরা দেখতে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজন আমার লোকের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায় এবং গুলি করে। তখন পরিকল্পিতভাবে তারা আমার চাচাতো ভাই ইয়াসিনকে হত্যা করে।
দুপুরে নিহত ই্য়াসিনের মরদেহ কোলাদী গ্রামে পৌঁছলে ইয়াসিন ও সুলতানের সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আওরঙ্গবাদ এলাকায় আবু সাইদের সমর্থকদের বেশ কয়েকটি বাড়িতেও হামলা চালায় তারা। হোসেনের দোতলা বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকালে ইয়াসিনের মরদেহ নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা।
মিছিল শেষে বিক্ষোভ সমাবেশে সুলতান মাহমুদ অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন থেকে সরাতে ও আমাকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে সাঈদ এর আগেও আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। গত কয়েক বছরে আমার বাবাকেও হত্যা করেছে। আমি কোনো হত্যারই বিচার পাইনি। সাইদের অত্যাচার থেকে এলাকাবাসীকে মুক্ত করতে আমি ও ইয়াসিন যৌথভাবেই নির্বাচনে নেমেছিলাম। ইয়াসিনকেও তারা হত্যা করলো। আমি আর ভোট চাইনা আমার স্বজনদের প্রাণ ফেরত চাই।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমার লোকজন নৌকার ভোট চাইতে গেলে কালাম মেম্বরকে সুলতানের লোকজন হাতুড়িপেটা করে। আজ সকালে আমি তাকে দেখতে যাই। ফিরে আসার পথে কোলাদী ইন্দ্রারা মোড়ে এলে সুলতানের লোকজন আমাদের ওপর গুলি করে। তখন আমাকে চতুরদিক থেকে ঘিরে ধরলে আমার ছোট ভাইয়ের পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় আমি পাশের ড্রেনে লাফিয়ে না পড়লে আমাকে তারা হত্যা করত। এ ঘটনায় আমার কয়েকজন সমর্থক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন।’
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিকস কনসালট্যান্ট ডা. রাশেদুল ইসলাম বলেন, আহত ১০-১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। কয়েকজনকে রাজশাহী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোকনউজজামান ‘ভাড়ারা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ৮-১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় অস্ত্রসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে।
পাবনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কায়সার আলম বলেন, বৈধ চেয়ারম্যান প্রার্থী নিহত হওয়ায়, ২০১০ সালের ইউপি নির্বাচনী বিধিমালা অনুসারে ভাড়ারা ইউনিয়নে ঐ পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন করা হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, শনিবার সন্ধ্যায় নিহত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলমের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পাবনা সদর থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ