২৫ সদস্যের ক্রিকেটারকে নিয়ে কন্ডিশনিং ক্যাম্পকে সামনে রেখে বগুড়ার শহীদ চান্দু ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ক্যাম্প শুরু হচ্ছে। ক্যাম্পকে সামনে রেখে সংস্কার করা হচ্ছে স্টেডিয়ামের। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে এই ক্যাম্পকে বিশেষ ক্যাম্প হিসেবে ধরা হচ্ছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত ক্যাম্প শেষে ১১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকা রওনা হবে বাংলাদেশ দল। এজন্য বগুড়ার এই স্টেডিয়ামে চলছে সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।
জানা যায়, ২০০৬ সালের ৫ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশ দলের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচই শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এরপর দেশের অন্যতম সেরা এই ভেন্যুতে আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করেনি বিসিবি। বাতিল হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক মর্যাদা। দীর্ঘ ১৬ বছরে কোনো সংস্কার হয়নি মাঠের। এখন নতুন করে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে এই স্টেডিয়াম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭০ সালে নির্মিত বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে আধুনিক রুপ দেওয়া হয় ২০০৩ সালে। ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আর্ন্তজাতিক মানের এই স্টেডিয়ামের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। এরপর ২০০৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের কিছুদিন পর আরও ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয় ফ্লাড লাইট। ১৮ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে ৪তলা বিশিষ্ট প্রেসবক্স, প্যাভিলিয়ন গ্যালারি, ভিআইপি গ্যালারি, ইনক্লোজার হসপিটালিটি বক্স, জিমনিসিয়াম ও ইনডোর প্রাকটিস গ্রাউন্ড নির্মাণ করা হয়।
২০০৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে ও ১৯ ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ে কানাডা ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সালে আইসিসির স্বীকৃতি পাওয়ার পর একটি মাত্র টেস্ট আর ৫টি ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে ছিল টেস্টে বাংলাদেশের পরাজয় এবং ৪টি ওয়ানডে ম্যাচে জয়। এর মধ্যে আবার বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কাকে হারানোর প্রথম স্বাদটা বগুড়ায় নিয়েছিল জাতীয় ক্রিকেট দল। ২০০৬ সালের পর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি বগুড়ায়।
বাংলাদেশ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরকে সামনে রেখে বগুড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকাগামী সম্ভাব্য টেস্ট দলের সদস্যদের নিয়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প আয়োজন করতে যাচ্ছে বিসিবি। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৬ ফেব্রুয়ারি এই ক্যাম্প শুরুর কথা রয়েছে। ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী টেস্ট অধিনায়ক মমিনুল হকের নেতৃত্ব বাংলা টাইগার্স টিমের জন্য শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এই কন্ডিশনিং ক্যাম্পে নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ টাইগার্স’।
বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর জামিল জানান, খেলোয়াড়দের ব্যবহারের জন্য দু'টি ড্রেসিংরুম আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। পুরাতন এসিগুলো খুলে নতুন এসি লাগানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে পুরাতন সোফা সরিয়ে নতুন সোফা বসানো হচ্ছে। ড্রেসিংরুম সংস্কার করে বসানো হয়েছে নতুন চেয়ার টেবিল। ড্রেসিংরুমের সঙ্গে থাকা অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রতিও নজর দেওয়া হচ্ছে। বিসিবি থেকে কর্মকর্তারা এসে এই কাজগুলো তদারকি করছেন। আমরা তাদের প্রয়োজন মত সার্পোট দিয়ে যাচ্ছি। মাঠে অনুশীলনের জন্য ৬টি এবং সেন্টার পিচ করা হয়েছে ৭টি। এর মধ্যে সেন্টার ৫টি আছে বাকি দুটি করা হবে ক্যাম্পের পরপরই। সবগুলো উইকেট হবে ঘাসযুক্ত উইকেট। পিচ ঢেকে রাখার জন্য নতুন আরও ২টি বিশালাকার পিচ কাভার হয়েছে। এই কাভার কবল থেকে সেন্ট্রাল উইকেট রক্ষা করবে।
আউটফিল্ডের ঘাস কাটার জন্য নতুন করে আরও ২টি মেশিন ঢাকা থেকে দিয়েছে। এটি অটোগ্রাস মাওয়ার মেশিন এবং ১টি হ্যান্ড গ্রাস মাওয়ার মেশিন। উইকেট পরিচর্যার জন্য আনা হয়েছে পিচ মাওয়ার মেশিন। পিচের যত্ন শুরু থেকেই নেওয়া হতো। এখন সেটি আরও ভালভাবে নেওয়া হচ্ছে। স্টেডিয়ামের পাশাপাশি ইনডোরের সংস্কারেও হাত দিয়েছে বিসিবি। ইনডোর টয়লেট সংস্কার এবং সিনথেটিক ফ্লোরম্যাট পরিবর্তন করা হচ্ছে। একই সাথে ইনডোর প্র্যাকটিস নেটও পরিবর্তন করা হচ্ছে।
বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলন জানান, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে শুরু হবে ক্যাম্প; চলবে ৭ মার্চ পর্যন্ত। ১১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশ্যে উড়াল দেবেন টাইগাররা। বাংলাদেশ টাইগার্সে রাখা হয়েছে জাতীয় দলের আশপাশে থাকা ক্রিকেটার, সদ্য শেষ হওয়া বিপিএল ও এর আগে হওয়া জাতীয় লিগ, বিসিএলে পারফর্ম করা ক্রিকেটারদের। যতদূর জানা গেছে, টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক, ফজলে রাব্বি, সাইফ হাসান, সাদমান, সৌম্য সরকার বিভিন্ন ক্রিকেটার এই ক্যাম্পে অংশ গ্রহণ করবে। এই ক্যাম্পে কোচিং করানোর জন্য থাকছে পরীক্ষিত কোচিং স্টাফ।
বিডি প্রতিদিন/এমআই