ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দী গ্রামে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে জান্দী গ্রামের ফলজা মাতব্বর ও জাহাঙ্গীর মাতব্বরের বাড়ির মাঝামাঝিতে ভাঙ্গার নওপাড়া থেকে তুজারপুরের উত্তর বাজারগামী আঞ্চলিক সড়কে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজনের একজন ঘটনাস্থলে নিহত হন। তার নাম সলেমান শরিফ (৩৫)। তিনি জান্দী গ্রামের মৃত গোপাল শরিফের ছেলে। সলেমান বিবাহিত এবং দুই মেয়ের বাবা। নিহত অপরজনের নাম কামরুল মাতব্বর (৩২)। তাকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান তিনি। কামরুল একই গ্রামের মৃত কামাল মাতব্বরের ছেলে। তিনি বিবাহিত এবং তার ১৮ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে।
এছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন ওই মোটরসাইকেলের চালক আমীরুল মাতব্বর (৪০)। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা মৃত মনিরউদ্দিন মাতব্বরের ছেলে। তবে তার আঘাত গুরুতর নয়। তাকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত কামরুলের চাচা, এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা এবং পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন নিহত কামরুল মাতব্বর এবং আরেক পক্ষের নেতৃত্ব দেন একই গ্রামের বাসিন্দা রুহুল মাতব্বরের ছেলে জামাল মাতব্বর (৪০)। কামরুলের বাবা মৃত কালাম মাতব্বর আগে ওই এলাকায় নেতৃত্ব দিতেন। তার মৃত্যুর পর জামাল নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন। এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি কামরুল। পরে কামরুল নিজে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন।
গত বুধবার জামাল মাতব্বরের সমর্থক শহীদ ব্যাপারী, নজরুল মোল্লা, টেপু মোল্লাসহ ১০-১২ জন কামরুলের দলে যোগ দেন। এ যোগদান উপলক্ষে গত বুধবার শহীদ ব্যাপারীর বাড়িতে এক ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কামরুল ও জামালের সাথে স্থানীয় পোদ্দার বাজারে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। পরে কামরুল বাড়িতে চলে যায়। রাত ৮টার দিকে কামরুল আবার পোদ্দার বাজারে আসেন। তারাবির নামাজের পর মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষের ১৫-২০ জন লোক তাদের কোপালে এ ঘটনা ঘটে।
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহসীনউদ্দিন ফকির জানান, আহত কামরুল মাতব্বরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরিদপুরে রেফার করেন। পরে সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকায় রেফার করা হয়। তাকে ঢাকা নেওয়ার পথে নবিনগর এলাকায় তার মৃত্যু হয়।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে আছেন, কিভাবে কি ঘটনা ঘটেছে তার খবর নিচ্ছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে একজন এবং ঢাকা নেওয়ার পথে একজন মারা গেছেন। এ বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই