কুড়িগ্রামে অসময়ে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে ঘরবাড়ি-বসতভিটে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভাঙন কবলিতরা। অনেকের ঘরের দরজায় এসে নদী কড়া নাড়ছে। যেকোনো মুহূর্তে বাপ-দাদার স্মৃতি বিজড়িত বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। অনেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ডে বারবার ধরনা দিলেও কাজের কাজ হচ্ছে না।
রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম মন্ডলপাড়া গ্রামের মৃত শরাফত মাস্টারের ছেলে মোস্তাক আহমেদ জানান, ‘গতবার নদী বাড়িভিটা সউগ খায়া গেইল। হালের গরু বিক্রি করি নতুন বাড়ি করলোং। এবারো ভাঙবের নাগছে বাহে। কামলা দিয়া খাই। এই বাড়ি গেইলে কী করি চলমো। মোর পকেটোত বিষ খাওয়ার মতো টেকা নাই।’
গত এক সপ্তাহ ধরে অবিরাম বর্ষণের ফলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এরই মধ্যে শুরু হয় তীব্র নদী ভাঙন। গত কয়েক দিনেই ভেঙেছে এখানকার বেশ কয়েকটি বাড়ি। হুমকিতে রয়েছে আরও ৭০/৮০টি বাড়ি।
ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম এলাকার সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম জানান, বর্ষা এখনো আসেনি। এরই মধ্যে হঠাৎ করে নদী ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালাসহ আধাপাকা বোরো ধান ক্ষেত। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৮টি মসজিদ ও একটি মাদ্রাসাসহ শত শত বিধা আবাদি জমি। বর্তমানে এই ইউনিয়নে গতিয়াসাম, রামহরি, কালিরহাট ও মেদনীপুর গ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সহায়তা চেয়েও কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পাউবোর কাছে কোনো বাজেট নাই। তিস্তা নদীর ভাঙন কবলিত বাম তীরে ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাকি ৩৫ কিলোমিটার উন্মুক্ত নদীর অনেক জায়গায় চলছে এখন ভাঙন। গত তিন দিনে বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিঘার পর বিঘা বোরো ধান, ফলদ ও কাঠের গাছসহ ভেঙে যাচ্ছে বিল্ডিং বাড়ি। এখন হুমকিতে রয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার।
রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক জানান, আমার ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড চরম হুমকিতে রয়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বললে তাদের কোনো বাজেট নেই বলে তারা জানান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোকে বাঁচান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, নদীর পানি বাড়ার কারণে তিস্তায় নদী ভাঙন গত কয়েক দিনে একটু বেড়েছে। তবে সরেজমিন তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গেছেন। শিগগিরই প্রকল্প অনুমোদন হলে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই