গৃহহীন ও ভাসমান অবস্থায় অন্যের জমিতে বা বাড়িতে থাকা মানুষগুলোর এবারের ঈদের দিন ছিল অন্যবারের চেয়ে আলাদা। নিজের জীবনে পাকা ঘর হবে এমন আশা ছিল না কখনও তাদের। এবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারে নতুন বাড়িতে ঈদ উদযাপন করেছেন তারা।
জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ৪ হাজার ২৪ জনের মধ্যে ঘর পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৪৩ জন। পরবর্তীতে আরও ঘর ৪৮১টি ঘর নির্মাণ করা হবে।
জানা যায়, জানুয়ারি ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী ৪ হাজার ২৪ জন ‘ক’-শ্রেণির ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ঠিক করা হয়। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২ হাজার ৩০৯টি ঘর বিতরণ করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ২৩৪টি ঘর নির্মাণ শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। খাস জায়গায় সরকারি অর্থে বাড়িগুলোর নির্মাণ কাজ করা হয়। গত ২৬ এপ্রিল মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সারাদেশে ৩২ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঈদ উপহার হিসবে ঘরগুলো হস্তান্তর করেন।
নতুন বাড়ি পাওয়ায় প্রতিটি পরিবারে বইছে আনন্দ। ঘরগুলো নির্মাণের পর পতিত এলাকাটি এখন মানুষের বসবাসের জন্য চকচকে করছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারে নতুন বাড়িতে ঈদ উদযাপন করেছেন বগুড়ার ১২টি উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা । প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় নিয়ে জেলায় মোট ঘর বিতরণ ও নির্মাণ কাজ হয়েছে ৩ হাজার ৫৪৩টি। আর বাকি ৪৮১টি ঘর ভূমিহীনদের তালিকা প্রস্তুত করে ঘর নির্মাণ শেষে বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ হয়েছে আদমদিঘি উপজেলায় ১২৫টি ঘর, সদরে ৪৭৩টি, ধুনটে ২২১টি, দুপচাঁচিয়ায় ২৮৩টি, গাবতলীতে ৭০টি, কাহালুতে ১০৭টি, নন্দীগ্রামে ২৩৬টি, সারিয়াকান্দিতে ১৫৮টি, শাজাহানপুরে ২৮টি, শেরপুরে ১৮০টি, শিবগঞ্জে ২৫৩টি, সোনাতলায় ১৭৫টি।
বগুড়া সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পাল জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা মোতাবেক গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। সরকারি জায়গা উদ্ধার থেকে শুরু করে গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণকাজ শেষে তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শাজাহানপুর উপজেলার ডোমনপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে ঘর পেয়েছে ৩২টি গৃহহীন পরিবার। এখানে আরও ১৩টি পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর দেওয়া হয়েছে। ঈদের দিন উপজেলার ডোমনপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্প গিয়ে দেখা যায়, নিজ ঘরে সবাই একত্রে প্রথমবারের মতো ঈদ উদযাপন করছেন। ঈদের দিন সকাল থেকে মুসলধারে বৃষ্টি হলেও তাদের আনন্দের সীমা নেই। নতুন ঘরে ঈদ করতে পেরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিশুরাও উচ্ছ্বসিত। ঈদে পরিবার পরিজন নিয়ে সেমাই, পোলাও রান্না করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে আনন্দ বাড়িয়ে দিতে ঈদের আগেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদ সামগ্রী পৌঁছে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ।
গ্রামে গ্রামে ঝাড়ু বিক্রি করেন বিউটি বেগম, স্বামীর মৃত্যুর পর নিজের জায়গা জমি বলতে তেমন কিছুই ছিল না। সাজাপুর পন্ডিতপাড়া গ্রামের প্রতিবেশীর উঠানের ওপর ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতেন তিনি। এবার ঠাঁই হয়েছে উপহারের পাকা ঘরে। তিনি বলেন, আগে অন্যের বারান্দায় কোনও মতে থাকতাম। নিজের জমি ও পাকা ঘর পাওয়া আমার কাছে স্বপ্নের মতো। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তাকে যুগ যুগ বাঁচিয়ে রাখুক।
কথা হয় রমিজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রিকশা চালিয়ে সন্তানহীন দম্পতির দিন কাটছিল কোনোমতে। আগে আমার ঘর ছিল না, বউ নিয়ে অনেক কষ্টে ছিলাম। সরকার আমাদের ঘর দিয়েছে। সেই ঘরে ঈদ করছি। এর চেয়ে আনন্দের কী হতে পারে। পাকা বাড়িতে থাকার কথা স্বপ্নেও ভাবিনি। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পেয়ে প্রথমবারের মতো গৃহহীন পরিবার নিজেদের পাকা ঘরে ঈদ করতে পারছেন। এটি তাদের জন্য অবশ্যই অনেক আনন্দের। অসহায় পরিবারগুলোর কাছে এটি বেঁচে থাকার নতুন অবলম্বন। তাদের মাঝে ঈদের খুশি ছড়িয়ে দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়।
বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক জানান, সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারে নতুন বাড়িতে যারা উঠেছেন তাদের প্রতিটি পরিবারে ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ঘর র্নিমাণকাজ আন্তরিকতার সঙ্গে করা হয়েছে। কাজের অগ্রগতিতে কোনও কমতি রাখা হয়নি। ভূমিহীনরা যেন ঠিকমত থাকতে পারেন। সেদিকে নজর রেখে কাজগুলো মজবুতভাবে করা হয়েছে। গৃহহীন ও ভাসমান অবস্থায় অন্যের জমিতে বা বাড়িতে থাকা মানুষগুলোর এবারের ঈদের দিন ছিল অন্যবারের চেয়ে আলাদা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পেয়ে ভূমিহীনরা বেজায় খুশি হয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/কালাম