বোরো ধানের ভরা মৌসুমেও কুষ্টিয়ায় চালের দাম যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। চরম অস্থির কুষ্টিয়ার চালের বাজার। কিছুতেই যেন দামের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। পাগলা ঘোড়ার মত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সব ধরণের চালের দাম। এবার এক লাফে কুষ্টিয়ার বাজারে চালের দাম তিন টাকা বেড়ে গেছে।
এ নিয়ে ছয় দফায় গত এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে কুষ্টিয়ায় চালের দাম কেজি প্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা যায় দুই-এক দিন অন্তর অন্তর এখানে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধির কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা। সবার এখন একটাই প্রশ্ন তাহলে চালের দাম শেষ পর্যন্ত কত টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে? এদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে সব ধারণের চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জায়গায় এর প্রভাব পড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে কুষ্টিয়া শহরের পৌর বাজার ও বড় বাজার ঘুরে চাল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের দুই একদিন আগে থেকেই কুষ্টিয়ায় চালের দাম বৃদ্ধি শুরু হয়। ঈদের পর থেকে যেন পাগলা ঘোড়ার মত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। সর্বশেষ শনিবার (২৮ মে) থেকে কুষ্টিয়ায় চালের দাম এক লাফে কেজিতে তিন টাকা বেড়েছে।
শনিবার থেকে কুষ্টিয়ার চালের বাজারে অটো রাইচ মিলে ভাঙানো মিনিকেট চাল ৬৬-৬৭ টাকা কেজি, সাধারণ মিনিকেট ৬৪ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো কাজললতা চাল ৫৭ টাকা, কাজললতা সাধারণ ৫২ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো বাসমতি চাল ৭৬ টাকা থেকে কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়, সাধারণ বাসমতি চাল ৭৬ টাকা, অটো রাইচ মিলে ভাঙানো কাটারীভোগ চাল ৭২ টাকা, নাজির শাইল চাল ৭৮ টাকা ও অটো রাইচ মিলে ভাঙানো পাইজাম চাল ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে গত এক মাসেরও কম সময়ে কুষ্টিয়ার বাজারে ছয় দফায় চালের দাম প্রায় ৮ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী আনিস জানান, দুই দিন আগে মিল গেটে যে দামে তারা চাল কিনছেন, পরের দিন সে দামে আর চাল কিনতে পারছেন না। বেশি দামে চাল কিনে আনতে হচ্ছে। মিল গেটে চালের দাম বেশি থাকলে আমরা কম দামে কিভাবে চাল বিক্রি করব। মে মাস ঝুড়ে বৃষ্টিপাত এবং ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে ধানের বাজার চড়া বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর মিল গেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিল গেটেও চালের দাম দফায় দফায় বেড়ে যাচ্ছে। খাজানগরের গোল্ডেন অটো রাইচ মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিহাদুজ্জামান জিকু জানান, বৃষ্টিপাত এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এ জেলার কৃষকদের প্রায় ৩০ ভাগ ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে বর্তমানে ধানের বাজার চড়া। প্রতিনিয়ত ধানের দাম বাড়ছে। ফলে বাধ্য হয়েই তাদেরকেও চালের দাম বাড়াতে হচ্ছে।
তিনি জানান, মে মাসের শুরুতে মিনিকেট ধানের বাজার ছিল ১১শ থেকে ১২শ টাকা মন। এখন সেই মিনিকেট ধান বাজারে ১৫শ টাকা মন কিনতে হচ্ছে। একইভাবে কাজললতা ১৩শ টাকা, আঠাশ ১৩শ থেকে সাড়ে ১৩শ এবং বাসমতি চাল সাড়ে ১৫শ থেকে ১৬শ টাকা মন কিনতে হচ্ছে। বর্তমানে খাজানগর মিল গেটে ৫০ কেজি মিনিকেট প্রকারভেদে ৩ হাজার ১শ থেকে ৩২শ ৫০ টাকা, কাজললতা ২ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং ২৫ কেজির বস্তা বাসমতি চাল এক হাজার ৮শ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে চালের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে সাধারণ ক্রেতারা কুষ্টিয়ার খাজানগরের এক শ্রেণীর মুনাফা লোভী আসাধু ব্যবসায়ী এবং সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। কুষ্টিয়া পৌর বাজারে চাল কিনতে আসা স্কুল শিক্ষক সোলাইমান হোসেন ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানান, কুষ্টিয়ায় চালের বাজারে প্রশাসনের কোন রকম তদারকি না থাকার কারণে মিলাররা এবং খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা খেয়াল খুশি মত চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। অথচও এ নিয়ে কাউরের কোন মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু মানুষজনের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তবে বর্তমান সময়ে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই বলে দাবি করে বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং রাইচ মিল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ জানান, বৃষ্টির কারণে মাঠের অনেক ধান নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত ধানের বাজার চড়া থাকছে। বেশি দামে ধান কেনার কারণে চালের দামও বেড়ে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বর্তমানে কুষ্টিয়ায় বোরো ধানের ভরা মৌসুম চলছে। ঈদের আগে থেকে কুষ্টিয়ায় বোরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই বোরা ধান কাটা প্রায় শেষের পথে।
এবার জেলার ৬টি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৩৫ হাজার ১শ ১০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যেখানে আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ২শ ১৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪শ ৭৮ মেট্রিকটন ধান। এ বছর ফলন বেশ ভালো হওয়ার আশা রয়েছে কৃষি বিভাগের।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল