নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে হোটেলের খাবারেও। হোটেল আর রেস্তোরাঁগুলোতে বাড়ানো হয়েছে সকাল, দুপুর ও বিকেলে প্রচলিত নাস্তা-খাবারের বিভিন্ন পদের দাম। বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তাসহ দুপুর ও রাতের খাবারের দাম এখন সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
কোনো কোনো হোটেল মালিক দাম না বাড়ালেও কমিয়ে দিচ্ছে খাবারের পরিমাণ। সব মিলে খাবারের হোটেলে স্বস্তি নেই ভোক্তাদের। এখানেও বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে অনেকেই রাস্তা ঘাটের হোটেলে খেতে যায়। কিন্তু সেখানেও হানা দিয়েছে দ্রব্যমূল্য। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রভাবটা পাল্টে দিয়েছে হোটেল রেস্তোরাঁর সব রকম খাবারের দাম। সেইসাথে বদলে গেছে মূল্য তালিকা।
শহরের বিভিন্ন ছোটবড় হোটেল রেস্তোরায় ঘুরে দেখা গেছে, সকালের নাস্তা ৭ টাকার পরোটা এখন ১০ টাকা, ৭ টাকার লুচি ১০ টাকা, সিদ্ধ আটার রুটিও ১০টাকা, আলুর সিঙ্গারা ৬ টাকার জায়গায় পরিমাণ কমিয়ে ৭ টাকা, ১২ টাকার কলিজার সিঙ্গারা ১৫ টাকা, সামুচা ১২ টাকা। আর ৯০ টাকার মুরগির মাংসের পিস ১১০ টাকা, বিকেলের খাবার ৫০ টাকার মোগলাই ৬০ টাকা, ৬ টাকার পুরি ৮ টাকা, ৫০ টাকার এক বাটি হালিম ৭০ টাকা। এছাড়া রাতের খাবার ২০ টাকার নান রুটি হয়ে গেছে ২৫ টাকা, শাহী পরাটাও একই দাম, ১১০ টাকার ১ প্লেট মুরগির ঝাল ফ্রাই ১৩০ টাকা। সেইসাথে হালকা খাবারের দামও বাড়তি। এখন পরোটার দাম বাড়লেও এর আকার ছোট হয়ে গেছে বলে জানান হোটেলে খেতে আসা ভোক্তারা।
ভাতের দাম না বাড়লেও বেড়েছে ডিম, সবজিসহ মাংস, মাছ আর তরকারির দাম। এ পরিস্থিতিতে ঘরে বাইরে বাড়তি খরচের হিসাব মেলাতে গিয়েই হিমশিম অবস্থা ভোক্তাদের। বলছেন, দাম বাড়ার প্রতিযোগিতায়ও নেমে পড়েছে হোটেল মালিকরা। তবে যে সব হোটেল মালিকরা দাম বাড়াচ্ছেন না, তারা কমিয়ে দিয়েছে খাবারের পরিমাণ।
হোটেলে খেতে আসা আশরাফ হোসেন ও মনতাজ আলী বলেন, করোনাকালীন হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো সীমিত আকারে খোলা থাকলেও সেসময় খাবারের মূল্য বাড়েনি। সাম্প্রতিক করোনার প্রভাব কমে আসলেও চলতি বছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করে সব খাতের পণ্যের দাম। বিশ্ববাজারের মতো এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও।
মেসসহ বিভিন্ন বাসায় ভাড়া থাকা ছাত্র নাহিদুল ইসলাম ও আরাফাত রহমান জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজ করে যে আয় করা হয়, তাতে সময় সময় হোটেলে খেতে হয়। যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে।
খাবারের দাম বাড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হোটেলের মালিকরা জানান, এখন সবকিছুর উপকরণের দামই বেড়েছে। পাশাপাশি জ্বালানির দাম বৃদ্ধিসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়ায় বাধ্য হয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। শুধু যে ভাতের হোটেলেই দাম বেড়েছে তা কিন্তু নয়, বেড়েছে বড় রেস্তোরাঁগুলোতেও। বাজারের প্রভাব পড়ায় বর্তমান পরিস্থিতিতে এ খাতের ব্যবসায়ীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ইতিমধ্যে হোটেল ব্যবসা কিছুটা কমে গেছে। আর স্বল্প আয়ের মানুষরা বাইরে খাবার খাওয়া এখন ছেড়েই দিয়েছেন। দামের প্রভাব পড়েছে বেকারি পণ্যতেও। পাউরুটি থেকে শুরু করে এ জাতীয় বেকারি পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে বেকারি ব্যবসায়ীরা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই