বগুড়া সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী এলাকার কাছাকাছি এলাকায় পানি প্রবশে করছে। বিপদসীমার কাছাকাছি পানি থাকায় নদী এলাকার কাছের পাট ও ধইঞ্চার ক্ষেত ক্ষতির মুখে পড়েছে। পানিতে আক্রান্ত ফসলগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন গুনছেন স্থানীয় কৃষকরা।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে দায়িত্বে থাকা গেজ রিডার পরশুরাম জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত যমুনা নদীতে সারিয়াকান্দির কালিতলা পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৪০ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে বাঙালি নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১৫. ৬০ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত কয়েক দিনের পানি বৃদ্ধিতে সারিয়াকান্দি উপজেলার দক্ষিণ শংকরপুর, পূর্ব ধারাবর্ষা, পশ্চিম ধারাবর্ষা, কেষ্টিয়ারচর, কোমরপুর, চানবাড়ী, মাঝবাড়ী, কালাইহাটা, পৌতিবাড়ী, চর মাঝিরা, হাতিয়া বাড়ী, কালিয়ান, আগ বোহাইল, নিজ বোহাইল, আওলাকান্দি, ভাংগারছেও উত্তর বেণীপুর, দক্ষিণ বেণীপুর, মিঠনেরপাড়া, কাজলা, বাওইটোনা, কুড়িপাড়া, পাকেরদহ, উত্তর টেংরাকুড়া, দক্ষিণ টেংরাকুড়া, পাকুড়িয়া, ময়ুরেরচর, ট্যাকামাগুড়া, চর ঘাগুয়া, জামথল, বেড়াপাঁচবাড়ীয়া ফাজিলপুর, বহুলাডাঙ্গা, চালুয়াবাড়ী, আওচারপাড়া, সুজালিরপাড়া, শিমুলতাইড়, তেলিগাড়ী, কাকালীহাতা, হরিরামপুর, ভাংগরগাছা, ধারাবরির্ষা, বিরামের পাঁচগাছি, হাটবাড়ী, দলিকা, মানিকদাইড়, কর্ণিবাড়ী, শনপচা, মুলবাড়ী, নান্দিনাচর, ডাকাতমারা, তালতলা, মিলনপুর, শালুখা, চর বাটিয়া, গজারিয়া, দারুনা, হাটশেরপুর, ধনারপাড়া, শিমুলবাড়ী, চকরতিনাথ, করমজাপাড়া, নয়াপাড়া, কর্ণিবাড়ী, ধরবন্ধ, দিঘাপাড়া ও ক্ষেপির পাড়াসহ ১১২টি চরের নিম্নাঞ্চল যমুনা নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এসব চরগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকার পশুচারণভূমি পানিতে ডুবে গেছে। ডুবে গেছে সবুজ ঘাস। ফলে ঘাসের অভাবে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ সবধরনের গৃহপালিত পশুগুলো খাদ্য সংকটের দিকে এগুচ্ছে। পানি বৃদ্ধিতে বন্যার আশঙ্কায় পাট কেটে জাগ দিয়ে রাখা পাটগুলো বিভিন্ন চরাঞ্চলগুলো থেকে ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাটের জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বাদশা জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তার ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেকের বেশি পাটের ফসল এখন পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
কাজলা ইউপির চর ঘাঘুয়া গ্রামের আবু বক্করের ছেলে কালু প্রাং জানান, তিনি ১৩ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। তার প্রায় ৮ বিঘার মতো পাটগাছ এখন পানিতে আংশিক নিমজ্জিত।
বোহাইল ইউপির দক্ষিণ শংকরপুর গ্রামের হোসেন আলী ভুঁইয়ার ছেলে গণি ভুঁইয়া জানান, তার ৯ বিঘা জমির পাটের মধ্যে ৫ বিঘা জমির পাটগাছ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
কর্নিবাড়ী ইউপির কাজের চরের আমির ফকির জানান, তিনি ১২ বিঘা জমিতে পাটের ফসল করেছিলেন। কিছু জমির পাট তিনি বন্যার খবরে অপরিপক্ক অবস্থাতেই কেটে জাগ দেন। এখনো তার ৪ ভাগের ৩ ভাগ পাটগাছ পানিতে সম্পূর্ণ এবং আংশিক নিমজ্জিত।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের অন্তারপাড়া গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান বাটুল বলেন, ৩ একর জমিতে পাটের ফসল করেছি। ২ দিনের পানির তোড়ে আমার অর্ধেক পাট পানিতে তলিয়ে গেছে। আর অর্ধেক পাট অপরিপক্ক অবস্থায় কাটা হয়েছে।
সারিয়াকান্দি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাসকিয়া বলেন, যমুনা ও বাঙালি নদীতে পানি বাড়ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে করে আগামী ১৮ এবং ১৯ জুনের মধ্যে যমুনা এবং বাঙালি নদীতে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এক্ষেত্রে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যাটি কতদিন স্থায়ী হবে, তা এখনো জানা যায়নি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, বিভিন্ন এলাকা হতে কৃষকের পাট এবং ধইঞ্চাসহ কয়েকটি ফসল নিমজ্জিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। খবর পাওয়ার পর ওই সব এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই