পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় একটি বাঁধ কেটে দেয়ায় দ্বিপ মাঝিয়ালী চরের ১৭০ টি পরিবারের প্রায় সহস্রাধিক মানুষের সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ওই গ্রামের চার পাশ ঘিরে করোতোয়া, ধরধরিয়া এবং পাথরাজ নদী প্রবাহিত হচ্ছে। গেল বন্যায় ধরধরিয়া খালের উপর নির্মিত বাঁধ কেটে দেয় স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। চলাচলের ব্যবস্থা না করেই হঠাৎ বাঁধ কেটে দেয়ায় চরটির চার পাশে থাকা গ্রামের কৃষকরাও যেতে পারছে না দ্বিপমাঝিয়ালী গ্রামে। ফলে উভয় পাশের হাজার হাজার মানুষ সংকটে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান চারদিকে নদী বেষ্টিত দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবারই বর্ষায় পানিবন্দী হয়ে থাকেন। বর্ষায় তাদের চলাচলের কোন পথ না থাকায় নৌকায় চলাচল করতে হয়। গ্রামটির শিক্ষার্থীদের বর্ষায় বিদ্যালয়ে কিংবা কলেজে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কৃষকেরা তাদের জমির উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করতে পারেন না। ফলে পুরো বর্ষা জুড়ে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দিন দিন গ্রামটি করতোয়ার ভাঙনের মুখে পড়ছে। এ থেকে রেহাই পেতে ২০২০ সালে গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় ৩ লাখ টাকা চাঁদা তুলে নিজেদের চলাচলের জন্য ধরধরিয়া খালের উৎপত্তিমুখে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। করোতোয়া নদীর একটি স্রোত থেকে উৎপত্তি হওয়া ধরধরিয়া খালে বর্ষাকালে পানি প্রবাহিত হয়। প্রায় এক কিলোমিটার প্রবাহিত হচ্ছে এই খাল। বাঁধ নির্মাণের পর গেল দুই বছর ভালভাবে চলাচল করতে পারলেও ভাঙনের অজুহাতে এ বছরের বন্যায় সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাতের অন্ধকারে বাঁধটি কেটে দেন। ফলে গ্রামের বাসিন্দারা আবারো পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েন।
দ্বিপ মাঝিয়ালী গ্রামের রহিমা খাতুন (৬০) জানান, আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি। ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে পারছে না। চলাচলের ব্যবস্থা না করেই তারা বাঁধটি কেটে দেয়। আমরা এখন খুব সমস্যায় আছি।
তবে আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনুর রহমান জানান, দুইশ বছর থেকে ধরধরিয়া নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীতে বাঁধ দেয়ার ফলে এপারের গ্রামগুলো ভাঙনের মুখে পড়েছে। তাই কেটে দিয়েছি।
এদিকে ধরধরিয়া খালের উপর বাঁধ নির্মাণের দাবিতে সম্প্রতি মানববন্ধনও করেছে স্থানীয়রা। গত মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) দুপুরে উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের মল্লিকাদহ ধোকরপাটি ও দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামের বাসিন্দাদের আয়োজনে করতোয়া নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। মানববন্ধনে প্রায় তিন শতাধিক স্থানীয় নারী ও পুরুষ অংশ নেয়।
স্থানীয়দের দাবি ধরধরিয়া খালের উপর ও ভাঙনের মুখে পড়া করতোয়া নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করা হলে আবারো তাদের চলাচলের সুব্যবস্থা হবে।
ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন সরেজমিনে ঘুরে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস। তিনি জানান, অবৈধভাবে বাঁধ কেটে দেয়ার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন