বগুড়ায় আগের থেকে বেড়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। গড়ে প্রতিমাসে ৬ থেকে ৭ জনের প্রাণ হারাচ্ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। সড়কে মহাসড়কে আধুনিক মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা, বয়সে তরুণ হওয়ায় সাবধানতা না থাকায় দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে বেশি। দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে আসছে ঈদুল আজহায় হাইওয়ের পাঁচ শতাধিক পুলিশ মাঠে নেমেছে।
জানা যায়, বগুড়া শহরে মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য প্রায় শতাধিক শোরুম রয়েছে। শোরুমগুলো বিভিন্ন দামের ও মানের মোটরসাইকেল বিক্রির হিড়িক পড়েছে ঈদুল আজহার আগে। সামর্থ্যবানরা নিজেদের সন্তানদের দাবি পূরণ করতে গিয়ে নিত্য নতুন ও আধুনিক মোটরসাইকেল কিনে দিচ্ছেন। তরুণরা আধুনিক এই মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে দক্ষতা না থাকায় সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। দক্ষতার সঙ্গে সাবধানতা না থাকায় বগুড়া জেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। মোটরসাইকেল কিনলেও বেশিরভাগ চালকদের থাকছে না মোটরসাইকেল চালানোর নিরাপত্তা সামগ্রী। যে কারণে দুর্ঘটনায় সহজে প্রাণ হারাচ্ছে বাইকাররা। মহাসড়কে বাইক চালাতে গিয়ে গতিও ঠিক রাখছে না। অতিমাত্রার গতি, বাইক নিয়ন্ত্রণে দক্ষতা কম থাকায় দুর্ঘটনার হার বেড়ে চলেছে। ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বাইক যোগে বগুড়াসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ঈদ করতে আসেন কমপক্ষে ১০ হাজার বাইকার। এই সংখ্যা বেশিও হতে পারে বলে বলছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বগুড়া বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার মোটরসাইকেলের লাইসেন্স করা আছে। আরো প্রায় ৪০ হাজার মোটরসাইকেলের লাইসেন্স ছাড়া চলছে। এদের মধ্যে অদক্ষ চালকও রয়েছে। লাইসেন্স করা মোটর সাইকেল চালকরা বগুড়া শহর ও মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের মধ্যে এক শ্রেণির চালক হচ্ছে বয়সে তরুণ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশ অনিয়ম করে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। সড়কে মহাসড়কে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইক চালাতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। তবে বিআরটিএ সরকারি নিয়মের মধ্যে লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। বয়স প্রমাণাদি না থাকলে লাইসেন্স প্রদান করা হয় না।
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়া শহরে তিনটি বার অনুমোদন পেয়েছে। তিনটি বারই হাইওয়ে মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। বারের পাশাপাশি কয়েকটি অনুমোদিত মদ বিক্রির দোকান রয়েছে। আর এসব বারে ও মদের দোকানে মদপান করে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়ন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত বেশ কিছু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১২ জন। এই হিসেবে বগুড়ায় গড়ে প্রতিমাসে ৬ থেকে ৭ জন করে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে। আইন অমান্য করে মোটরসাইকেল চালানোর দায়ে ১ হাজার ৯০৫টি মোটরসাইকেল চালকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গত ৬ মাসে জরিমানা করা হয়েছে ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। এই জরিমানা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এবার আসছে ঈদুল আজহায় সড়কে দুর্ঘটনা রোধে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নজরদারি বাড়াতে বগুড়ার বনানী থেকে জেলার শেষ সীমানা বগুড়া বাজার পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশের চারটি মোটরসাইকেলে ৮ জন সদস্য ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বপালনকালে সদস্যরা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে কাজ করবেন। এছাড়া বাসে ডাকাতি, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টি এবং মহাসড়কে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা না করতে পারে সেই বিষয়ে কাজ করবে। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া সীমানায় থাকা হাইওয়ে মোটেলে যানবাহন থামিয়ে সড়কে চাপ সৃষ্টি না করে সে বিষয়েও কাজ করবে।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের পুলিশ সুপার মুুনশী শাহাবুদ্দিন জানান, ঈদের ছুটিতে বগুড়া সড়ক মহাসড়কে যেন দুর্ঘটনা না হয় সে বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সড়কে সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। বগুড়া রিজিয়নের আওতায় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্যরা মাঠে নেমেছে।
তিনি বলেন, বগুড়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার প্রবণতা বেশি। ঈদের ছুটিতে পবিত্র ঈদুল আজহার আগের তিন দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরের তিন দিন মহাসড়কে যৌক্তিক কারণ ছাড়া মোটরসাইকেল চালাতে দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে সড়ক মহাসড়কে ইজি বাইক, মোটরসাইকেল ও চার্জার রিকশা নামতে দেওয়া হবে না।
বিডি প্রতিদিন/এমআই