সকালে ভিটেবাড়ি সবই ছিল, কিন্তু দুপুর গড়াইতেই সব উধাও! চোখের সামনেই নিজের বাড়িঘর তিস্তার গর্ভে বিলীন হতে দেখেছেন মনির মিয়ার। এমন কষ্টের দৃশ্য মেনে নিতে পারছেন না তিনি। ভিটেবাড়ি হারিয়ে মনির এখন দিশেহারা।
শুধু মনির নয়, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন ওয়ার্ডের সাহানুর, আফছার, ঝন্টু, গফফার, এবাদ আলী, এমাম উদ্দিনসহ ১৬টি পরিবারের বাড়িঘর মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলোর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে সেখানকার আকাশ-বাতাস। কেউ কেউ তিস্তার ভাঙন থেকে কোনোমতে ঘর রক্ষা করতে পারলেও রক্ষা করতে পারেননি মূল্যবান গাছপালা। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এসব পরিবার আজ দিশেহারা। এমনই দৃশ্য দেখা গেছে, মঙ্গলবার লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় প্রবল স্রোতে গড্ডিমারি পাউবোর বাঁধ, সির্ন্দুনার বালুর বাঁধ, মহিষখোচা ইউনিয়নের সলেডি স্পার-২ সংলগ্ন এলাকা ও গোবরধন ৭ নং ও ৮ নং ওয়ার্ডের কিছু অংশে আঘাত হানে।
এদিকে সোমবার রাত ১১টার দিকে সলেডি স্পার-২ এর ভাটিতে থাকা ৬টি পরিবারের বাড়িঘর মাত্র ৩০ মিনিটের মাথায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী ও স্থানীয় এলাকাবাসী তিস্তা নদীর হাত থেকে এসব পরিবারের বাড়িঘর উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে নেন। কিন্তু এসব পরিবারের মূল্যবান গাছপালা চোখের পলকে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। আর সলেডি স্পার-২ এর বাঁধটি তিস্তা নদী আঘাত হানতে শুরু করে। খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে মহিষখোচা ইউনিয়নের সলেডি স্পার-২ বাঁধটি রক্ষার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেই সাথে মজুদ রাখা দেড় হাজার সিসি ব্লকও ফেলা হচ্ছে তিস্তা নদীতে।
পানির স্রোতে জেলার ৫টি উপজেলার ১৭টি পয়েন্টে তিস্তায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ৩৫টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।
মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী জানান, পানি কমার সাথে সাথে তিস্তা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের বিষয়ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম জানান, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলোর তালিকা তৈরির জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত ওই ইউনিয়নে সরকারীভাবে ২ মেট্রিকটন জিআর চাল, এক লক্ষ টাকা আর ২শ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি এম সারোয়ার জানান, সার্বক্ষণিকভাবে নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও ব্যাগে বালুর বস্তা ও সিসি ব্লক তিস্তা নদী ফেলা হচ্ছে।
লালমনিরহাটের দোয়ানী পয়েন্টে মঙ্গলবার তিস্তা নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৪৫ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা-ধরলার চরে পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ। অধিকাংশ চরেই পৌছেনি ত্রাণ কিংবা সাহায্য সহযোগিতা,দুভোর্গে পড়েছে ভানবাসী মানুষ। সরকারিভাবে যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
বিডি প্রতিদি/নাজমুল