কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের এমপি কর্তৃক নিজ নির্বাচনী এলাকার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত ও মারধর করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ঝাড়ু মিছিল করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মাধাইয়া বাস স্টেশন এলাকায় ওই প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করে। এ সময়ে সড়কের দু’পাশে কয়েকশ’ যানবাহন আটকে পড়ে।
অপরদিকে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগদান করতে আসা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গাড়িবহরে এমপির সমর্থকদের হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মারাত্মক আহত ৫ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানা যায়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. হুমায়ুন কবির, ভাণী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মো. জালাল উদ্দিন, রাজামেহার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন, ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কেএম কামরুজ্জামান মাসুদ, বরকামতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শাহ আলম, ভাণী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. আলী আশরাফ মেম্বার প্রমুখ।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা (উ.) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদকে লাঞ্ছিত ও মারধরের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, একজন এমপির কাছে এমন প্রত্যাশা দেবীদ্বারবাসী করেনি। স্থানীয় এমপি রাজী ফখরুলের এ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এলাহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সরকার জানান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা (উ.) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদকে স্থানীয় এমপি কর্তৃক লাঞ্ছিত ও মারধর করার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে চেয়ারম্যানের সমর্থকদের গাড়িবহরে এমপির সমর্থক কুমিল্লা উত্তর জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন সরকার ও তার ভাগিনা সৈকতের নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। এসময় অন্তত ১৫-১৬ জন আহত হন। মারাত্মক আহত উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম, এলাহাবাদ পূর্বপাড়া উটখাড়া গ্রামের আবুল কাসেমের প্রতিবন্ধী ছেলে খোরশেদ আলম, একই গ্রামের হামিদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী, ধামতী গ্রামের মেহেদী হাসান ও মফিজুল ইসলাম পিতাসহ মোট পাঁজজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে, গত ১৬ জুলাই জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি সভায় একটি ইউনিয়ন কমিটির নাম ঘোষণাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল’র কর্তৃক লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হন দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং কুমিল্লা (উ.) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ। ওই ঘটনার পর থেকে দেবীদ্বারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। উভয় পক্ষের প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রয়েছে।
দাউদকান্দি-চান্দিনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফয়েজ ইকবাল বলেন, আজ বিক্ষোভ মিছিলকালে মাধাইয়া এলাকায় কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি, মিছিলের কারণে যানবাহন চলাচলে তেমন বড়ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি হয়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক ছিলো। দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর জানান, দেবীদ্বার বাগুর এলাকায় হামলার সংবাদ শুনে অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। একটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। ২-৩ জন আহত হওয়ার সংবাদ পেয়েছি। ওই ঘটনায় এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক