বগুড়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক ও সংস্কার না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই দুর্ভোগে পড়েন শহরবাসী। বিশেষ করে শহরের সাতমাথা, স্টেশন রোড, গোহাইল রোড, শেরপুরে রোড কলোনি এলাকা, শহরের ঝাউতলা, চকযাদু রোড, নামাজগড় এলাকায় বৃষ্টির পানি সড়কে জমে যায়। ফলে যান চলাচলসহ পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়ে। সংস্কারের অভাবে এসব এলাকার ড্রেন প্রায় অকেজো। সেই সাথে ড্রেন পরিষ্কারের কাজও ধীরগতি। ফলে সঠিকভাবে বৃষ্টির পানি সরবরাহ না হওয়ায় রাস্তায় পানি জমে যায়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে বগুড়ায়। কখনো কম আবার কখনো বেশি। বৃষ্টির ফলে কোথাও কোথাও ড্রেনের পানি ও ময়লা-আবর্জনা উপচে সড়কে চলে আসায় অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায় সড়ক। ড্রেনেজ সংস্কার না থাকায় বৃষ্টির পানির সাথে ড্রেনের ময়লা আবর্জনায় ভরে যায় শহর। শহরের রাস্তায় তখন ভেসে থাকে ময়লার স্তুপ। এসব নোংরা ও দূষণ পানি উপক্ষো করে শহরবাসীকে প্রয়োজনীয় কাজ করতে হচ্ছে। নোংরা পানির মধ্য দিয়ে স্কুল যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পথচারীদের এ নিয়ে অনেক অভিযোগ থাকলেও বগুড়া পৌরসভা থেকে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
বৃষ্টি শুরু হলেই শহরের অধিকাংশ রিকশার ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ হয়। ফলে সাধারণ মানুষের ভাড়া বেশি দিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় রিকশার সংকট দেখা দেয়। বৃষ্টির কারণে এদিন শহরজুড়ে যান চলাচলসহ পথচারীদের বিচরণ অন্য দিনের মতো কম ছিল। বিনোদন পার্ক, বিভিন্ন হোটেল ও মার্কেটগুলো বেশির ভাগ ফাঁকা ছিল। দিনব্যাপী বৃষ্টিতে হাঁটুপানিতে দুর্ভোগ ছিল চরমে।
শহরে আসা পথচারী মানিক জানান, প্রয়োজনের তাগিদে বৃষ্টিকে উপক্ষো করে বাড়ি থেকে শহরে এসেছি। শহরে ঢুকে দেখি রাস্তায় হাঁটুপানি। চলাফেরা করাই কষ্ট। ড্রেন দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় শহরের এমন অবস্থা। আমাদের মতো সাধারণ জনগণ শরীরে জামা-কাপড় ভিজে চলাফেরা করতে হয়। আমরা বগুড়াবাসী এমন দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই।
রিকশাচালক জামাল উদ্দিন জানান, রোজগারের জন্য বৃষ্টির মধ্যেই সেই সকালে বের হয়েছি। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রিকশা চালাচ্ছি। অন্যদিনের মতো আজ যাত্রী অনেকটা কম। শহরজুড়ে সড়কে বৃষ্টিতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে। এমন অবস্থায় রিকশা চালান কষ্টকর। অনেক সময় সড়কে জমানো পানি দিয়ে রিকশা নষ্টও হয়ে যায়। আমরা এমন দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে চাই।
এদিকে শহরের ড্রেনেজ সংস্কার না করায় পানি নামতে দেখা যায়নি। দীর্ঘক্ষণ পানি জমে থাকায় সাধারণ পথচারীরা দুর্ভোগে পড়েন। খানাখন্দে ভরা বগুড়া শহরের সড়কগুলোতে এমনিতেই চলাচল করা কষ্টদায়ক, তার মধ্যে দিনব্যাপী বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় কাদা জমে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় সূর্যের দেখা তেমন মেলেনি।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশেকুর রহমান জানান, বগুড়ায় গতকাল রাত থেকে মুষলধারে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৬ ঘণ্টায় জেলায় ১০৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রের্কড করা হয়েছে। যা এখন পর্যন্ত এই মৌসুমে সর্বোচ্চ। এছাড়া একই এসময়ে বাতাসের গতিবেগ রেকর্ড করা হয়ছে ৪০ কিলোমিটার।
তিনি আরও জানান, সারাদিনই মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপের কারণে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এছাড়াও এই বৃষ্টি আগামী ৩ দিন স্থায়ী হয়ে ১৬ তারিখ পর্যন্ত থাকতে পারে।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, যেসব এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করা নেই, একটু পানিতে বৃষ্টির পানি জমে যায়, সেসব এলাকায় পৌরসভা থেকে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করা হবে। তাছাড়া বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর বৃষ্টির পানিও নেমে যায়। তারপরও কোনো এলাকায় পানি জমে থাকলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই