কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে চতুর্থ (১১) ও হেফজ (১২) শ্রেণীর দুই মাদ্রাসা ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। হত্যার হুমকি দিয়ে গত একমাস ধরে যৌন নিপীড়ন করা হয়। সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন কুমারখালী ফয়জুল উলুম কওমি মহিলা মাদ্রাসার দুই ছাত্রী ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।
দুই মাদ্রাসা ছাত্রীকে নিপীড়নের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর ওই বাড়ির মালিক আত্মগোপন করেছেন। অভিযুক্ত ওই বাড়ি মালিকের নাম হাজী মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি পৌরসভার দূর্গাপুর এলাকার মৃত নুরুল হক বিশ্বাসের ছেলে। তিনি উপজেলা সাব রেজিট্রি কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ট্যাক্স কালেক্টর ও দুই সন্তানের জনক।
মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাড়ার চুক্তিতে প্রায় সাত মাস পূর্বে মহিলা মাদ্রাসাটি দূর্গাপুর এলাকার হাজী মো.শহিদুল ইসলামের বাড়িতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেণীর ৩৩ জন ছাত্রী ও ৩ জন শিক্ষিকা রয়েছেন। মাদ্রাসার একটি কক্ষে বাড়ি মালিক ও তার স্ত্রী থাকেন। মোবাইল ফোন চার্জ দিতে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ওই কক্ষে যায়। সেই সুযোগে চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে প্রায় মাসখানেক আগে প্রথমে যৌন নিপীড়ন করেন বাড়ির মালিক হাজী মো. শহিদুল ইসলাম। এরপর থেকে হত্যার হুমকি দিয়ে ওই ছাত্রীকে নিয়মিত যৌন নিপীড়ন করে আসছিলেন ওই বাড়ির মালিক।
গত বুধবার হেফজ পড়ুয়া আরেক ছাত্রী মোবাইল ফোন চার্জ দিতে গিয়ে শহিদুলের অপকর্ম দেখে ফেলে। এ সময় শহিদুল দেখা ফেলা ওই ছাত্রীকে ২৩০ টাকা দিয়ে ঘটনাটি অন্য কাউকে না জানানোর প্রস্তাব দিলে ওই ছাত্রী এতে অসম্মতি জানালে তাকেও হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক যৌন নিপীড়ন করা হয়। নির্যাতনের শিকার ওই দুই ছাত্রী জানান, হত্যার হুমকি দিয়ে বাড়িওয়ালা অনেকদিন ধরে তাদের নিপীড়ন করে আসছে। নির্যাতনের শিকার চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রী জানান, তার বুকে, গলায় হাতের আঙ্গুলে আঁচর লেগে আছে।
নির্যাতনের শিকার এক ছাত্রীর বাবা বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমার মেয়ে এমন ঘটনার শিকার হয়েছে। কুমারখালী ফয়জুল উলুম কওমি মহিলা মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আকামউদ্দিন আকাই জানান, কয়েকদিন আগে জানতে পেরেছি ছাত্রীদের হত্যার হুমকি দিয়ে যৌন নিপীড়ন করেছেন বাড়ির মালিক। তাদের সাথে খুব খারাপ কাজ করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে মুঠোফোনে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ২০১৯ সালে হজ্জ করেছি। এমন কাজ আমি করতে পারি না। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। শুক্রবার সকালে কুমারখালী থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, সাংবাদিকদের কাছ থেকে ঘটনাটি জেনে বৃহস্পতিবার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পুলিশের কাছে কেউ এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ জানায়নি। তা ছাড়া এ ঘটনায় থানায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর